ফেরদৌস-মৌসুমী বাংলা ছবির আলোচিত জুটি। অনেকদিন পর এ জুটিকে পর্দায় আনতে চাচ্ছেন দেলোয়ার জাহান ঝন্টু। এ ছবিতে অভিনয়ের কথা কি চূড়ান্ত?
ঈদের আগে ঝন্টু ভাই বলেছিলেন, আমাকে আর মৌসুমীকে নিয়ে একটা দুর্দান্ত গল্প রেডি করেছেন। তারপর তো লকডাউন শুরু হয়ে গেল। তাঁর সঙ্গে এর আগে আমি একটা ছবি করেছিলাম মুক্তিযুদ্ধের উপরে। তিনি তো আমার খুবই পছন্দের একজন মানুষ। যদি ঝন্টু ভাই ওইরকম কোনো ছবির পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেন, অবশ্যই করব। কিন্তু এখনো কিছু ফাইনাল হয়নি। আপনাকে কে বললো?
এফডিসিতে এটা নিয়ে আলাপ করছিলেন কয়েকজন। সেখান থেকে জানতে পারলাম।
আমাকে বলেছে, ‘তোকে আর মৌসুমীকে নিয়ে একটা অসাধারণ গল্প রেডি করছি। আমার জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গল্প।’ শুনে খুব ভালো লেগেছে আমার।
আমি আসলে এমনি এমনি লিখি মাঝেমাঝে। আমার একটা ভ্রমণ কাহিনি, তার সঙ্গে দুটো কাল্পনিক চরিত্র জুড়ে দিয়ে একটা বই লিখছি। ফিকশন টাইপের আরকি। তো দেখি, এবার বইমেলায় প্রকাশের ইচ্ছা আছে। লিখতে আমার বেশ প্রবলেম হয়। আমি তো হাতে লিখি। কাগজে কলমে। ধৈর্য হারিয়ে ফেলি মাঝে মধ্যে। টাইপ করে লিখতে পারি না। টাইপ করে লিখলে আমার ইমোশনটা আসে না।
শোবিজের প্রায় সবাই অনেকদিন ধরে ঘরবন্দি। ধীরে ধীরে কাজ শুরু হচ্ছে। আপনিও তো শুটিং শুরু করলেন…
হৃদি হকের পরিচালনায় ‘১৯৭১: সেই সব দিন’ ছবির কাজ শুরু করলাম আজ (গতকাল) থেকে। সাভার ক্যান্টনমেন্টে হচ্ছে শুটিং। এ ছবিতে আমি অভিনয় করছি সঞ্জু চরিত্রে, যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক। এর আগেও আমি সরকারি অনুদানে কিংবা অনুদানের বাইরেও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গল্পের ছবিতে অভিনয় করেছি। কিন্তু মনে হচ্ছে যে ‘১৯৭১: সেই সব দিন’ আমার করা মুক্তিযুদ্ধের গল্পের ছবিগুলোর মধ্যে অন্যতম ভালো ছবি।
আমার কাছে মনে হচ্ছে, মহামারীর যে অবস্থা এখন, আরো যদি রিকভার করে, তাহলে আরো কিছু হল খুলবে। ইতিমধ্যে কিছু মাল্টিপ্লেক্স তৈরি হয়েছে। আরও কিছু তৈরি হওয়ার কথা। সেই হিসেবে এই যে নতুন মাধ্যমগুলো আসছে, ওটিটি প্ল্যাটফর্ম, সেটা খুবই ইতিবাচক। এজন্য যে, আর্টিস্ট-টেকনিশিয়ানদের কাজের পরিধি বাড়ছে। যেটা খুব দরকার ছিল। কারণ গত দেড় দুই বছর ধরে শিল্পী-কলাকুশলী যারা পার-ডে হিসেবে কাজ করেন, তাদের খুব বাজে অবস্থা যাচ্ছিল। এক্ষেত্রে ওয়েব সিরিজ, ওয়েব ফিল্ম হওয়াতে কাজের বিস্তার ঘটেছে। এরমধ্যে আমরা অবশ্যই কোয়ালিটিফুল কিছু কাজ পাচ্ছি, পেয়েছি এবং পাব। কনটেন্টগুলো যদিও এখন অন্যরকম হচ্ছে, এ মুহূর্তে যে ধরনের কনটেন্ট বেশি চলছে, থ্রিলার-অ্যাকশন টাইপের। কিন্তু আমার কাছ মনে হয়, কিছুদিনের মধ্যে আরও জীবনঘনিষ্ঠ কনটেন্ট আমরা পাব। যেগুলো নিয়ে হয়তো মানুষ সাধারণত ফিল্ম করার সাহস করে না।
ডেফিনেটলি। আমরা তো কখনো ভাবিনি যে, মোবাইল হাতে নিয়ে ছবি দেখব। আমাদের জেনারেশনেই কিন্তু আমরা অনেককিছু দেখলাম। আমরা থার্টি ফাইভে কাজ করেছি, ডিজিটালিও করলাম, আবার এখন ওয়েব কনটেন্টেও কাজ করছি। এরপরও যদি নতুন কিছু চলে আসে, সে মাধ্যমেও হয়তো আমরা কাজ করব। মাধ্যম আসতে থাকবে। মাধ্যমের সাথে সাথে নিজেকে পরিবর্তন করতে হবে। অভিনয় স্টাইলে, মেকিংয়ে পরিবর্তন আনতে হবে। এই ব্যাপারে সচেতন হতে হবে সবাইকে।
আপনাকে যদি ওয়েব ফিল্ম বা সিরিজে কাজের অফার দেওয়া হয়। করবেন?
নিশ্চয়ই করব। যদি ওয়েব কনটেন্টে আমি যাই, সেক্ষেত্রে আমি প্রেফার করবো একবারেই আউট অব দ্য বক্স কনটেন্ট। যে ধরনের চরিত্র আমি করিনি, এবং আমাকে কেউ কখনো দেখেইনি এমন চরিত্র দিয়ে আমি ওয়েব কনটেন্টে আসতে চাই।
আমি সবসময় চেষ্টা করি নিজেকে ভেঙে গড়ার। আমি কখনোই মনোটনি হতে চাই না। এজন্য আমি জুটি প্রথায়ও বিশ্বাসী না। কারণ আমাদের দেশে যেভাবে জুটি তৈরি করা হতো, জুটিটাকে মনোটোনাস করে ফেলত। যখন ফেরদৌস-শাবনূর চলতে থাকলো কিংবা ফেরদৌস-মৌসুমী, তখন একই টাইপের ছবি আসতো। একপর্যায়ে জুটির ওপর নির্ভরশীল হয়ে যান পরিচালকরা। এজন্য জুটিপ্রথায় প্রথম থেকেই বিশ্বাসী ছিলাম না। আমি সবসময় ভেঙে ভেঙে কাজ করি। ফেরদৌস মানেই আরবান ফিল্ম করবে, মডার্ন ফিল্ম করবে… সেই ধারণা থেকে বেরিয়ে একেবারেই অফট্র্যাকের কাজ করেছি আমি। ডোমের চরিত্র করেছি, কৃষকের চরিত্র করেছি, চোরের চরিত্র, জুয়াড়ির চরিত্র; নানান ধরনের কাজে নিজেকে প্রমাণের চেষ্টা করেছি। এটাই নিজের সাথে আমার নিজের একধরনের লড়াই।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন: খায়রুল বাসার নির্ঝর