বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিখ্যাত উপন্যাস ‘আরণ্যক’। তাতে উপজীব্য ছিল অরণ্য। নেটফ্লিক্সের একই নামের ওয়েব সিরিজেও মূল চরিত্র একই। সেখানেও অরণ্যই সব রহস্য ও ধোঁয়াশার আধার। তবে কি বিভূতিভূষণের সত্যচরণই এ কালে অঙ্গদ হয়ে ফিরে এল?
সম্প্রতি ওটিটি প্ল্যাটফর্ম নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছে বিনয় ওয়াইকালের পরিচালনায় তৈরি ভারতীয় ওয়েব সিরিজ ‘আরণ্যক’। এর ট্রেলার দেখেই শিহরণ ও রহস্যের ঘনঘটা আঁচ করা যায়। আর সেই রহস্যের মূল যে জঙ্গলের গহিনে, সেটিও কিছুটা আন্দাজ হয়।
আরণ্যক-এর প্রথম পর্বেই অঙ্গদ মালিক (পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়) পরিচিত হন দর্শকদের সঙ্গে। আগের ঘটনার ফ্ল্যাশব্যাকে এই চরিত্রের মানসিক অবস্থার বা অস্থিরতার হেতু জানা যায়। সত্যচরণের মতো অঙ্গদও বাইরে থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসা লোক। তবে তাতেও কি সব স্পষ্ট হয়? এই অস্পষ্ট ধোঁয়াশা সিরিজজুড়েই ছিল। ছিল ‘শেষ হইয়াও হইল না শেষ’। সে কারণেই সিরিজের শুরুতে কস্তুরি (রাভিনা ট্যান্ডন) পুলিশের দায়িত্ব থেকে সাময়িক ছুটি নেওয়ার ঘোষণা দিলেও তাতে আস্থা রাখার মতো দর্শক কমই মিলবে।
সিরিজের কাহিনিতে ঢুকতে ঢুকতেই চলে আসে রহস্য। দেশলাইয়ের কাঠি প্রথম জ্বলে এক বিদেশিনীর কিশোরী মেয়ে নিখোঁজ হওয়ার খবরে। নিখোঁজ সংবাদ একসময় রূপ নেয় খুনের তদন্তে। আসে মিথ, তার অবয়ব আঁকে চিতাবাঘ ও মানুষের যুগলবন্দী। প্রেক্ষাপট আরও জটিল করে দেয় স্থানীয় রাজনীতি ও তার জটিল হিসাব। তবে দিনশেষে প্রশ্ন ছিল একটাই—সবকিছুর পেছনে কে? আর সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে দর্শকের সামনে নিয়ত হাজির হতে থাকে একের পর এক চমক এবং সেগুলো আরোপিত নয় মোটেও।
গল্পের শুরুটা অঙ্গদকে দিয়ে। কস্তুরি ডোগরাও আসে দ্রুতই, সেই সঙ্গে মহাদেব (আশুতোষ রানা)। মূলত এই তিনটি চরিত্রই পুরো সিরিজের প্রাণ। পরমব্রত ও আশুতোষ রানা পরস্পরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেছেন। ওটিটির দুনিয়ায় আশুতোষ রানাকে নিত্যনতুন রূপে দেখার সৌভাগ্য হচ্ছে দর্শকদের। পরমব্রত ছিলেন পরম সাবলীল। তবে চমকাতে হয় রাভিনাকে দেখে। নাচ-গানের চূড়ান্ত বাণিজ্যিক হিন্দি ছবির নায়িকাকে ছাপিয়ে গেছে আরণ্যকের কস্তুরি—এটি বলাই যায়।
এককথায়—ক্যামেরার কাজে ‘আরণ্যক’ দুর্দান্ত, সিনেমাটোগ্রাফিতেও। পাহাড় ও অরণ্য ফুটে উঠেছে অপরূপ রূপেই। পাহাড় ও অরণ্য বিশালতা দেয়, দেয় হাহাকার ভরা শূন্যতাও। এই দুইকেই দেখিয়েছে ‘আরণ্যক’। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, প্রযোজকেরা এই সিরিজের দ্বিতীয় কিস্তি তৈরিতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। প্রথম কিস্তির শেষ পর্বেও সেই ইঙ্গিত মিলেছে বটে। তা হাজির হতে হতে বরং প্রথম সিজনটা দেখে নিতে পারেন। ঠকবেন না।