পাঞ্জাবের লুধিয়ানার এক সাধারণ পরিবার থেকে তাঁর উঠে আসা। মূলধন বলতে ছিল চোখভরা স্বপ্ন আর কয়েক শ সাদাকালো ছবি। নায়ক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে গিয়েছিলেন মুম্বাইয়ে। চিত্রজগতে তাঁর চেনাজানা কেউ ছিল না। পোস্ট অফিসই ছিল তাঁর স্বপ্নের দরজা। মাসের পর মাস দুই শতাধিক চিঠি পাঠিয়েছেন পরিচালক-প্রযোজকদের কাছে।
খামের ভেতরে থাকত তাঁর সাদাকালো ছবি আর হাতে লেখা কয়েক লাইন, ‘অভিনয় করতে চাই, সুযোগ পেলে নিজেকে প্রমাণ করব।’ এই চিঠি পরিচালক-প্রযোজকদের কাছে পৌঁছাত কি না, সে নিশ্চয়তা ছিল না। তবু হাল ছাড়েননি ধর্মেন্দ্র। একবার এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘যেদিন পোস্ট অফিসে যেতাম না, মনে হতো, স্বপ্ন থেকে এক ধাপ পিছিয়ে গেলাম।’ এই নিরলস চেষ্টাই একসময় তাঁকে পৌঁছে দেয় ফিল্মফেয়ার নিউ ট্যালেন্ট প্রতিযোগিতার দোরগোড়ায়। সেখান থেকেই খুলে যায় মুম্বাইয়ের স্টুডিওর দরজা।
২৪ বছর বয়সে ‘দিল ভি তেরা হাম ভি তেরে’ দিয়ে শুরু করেন সিনেমাযাত্রা। প্রথম দিকে ‘বন্দিনী’, ‘আয়ে মিলন কি বেলা’, ‘কাজল’-এর মতো সিনেমায় সহ-অভিনেতার চরিত্রে নজর কাড়েন। ১৯৬৪ সালের যুদ্ধনির্ভর সিনেমা ‘হকিকত’ তাঁকে প্রথম বড় সাফল্য এনে দেয়। এরপর ‘ফুল অউর পাথর’ দিয়ে ধর্মেন্দ্র হয়ে ওঠেন বক্স অফিসের নতুন ভরসা। ষাটের দশকের শেষ থেকে সত্তরের দশক পর্যন্ত একের পর এক হিট—‘অনুপমা’, ‘আদমি অউর ইনসান’, ‘মেরা গাঁও মেরা দেশ’, ‘সীতা অউর গীতা’, ‘শোলে’, ‘লোফার’, ‘ইয়াদোঁ কি বারাত’, ‘ধর্মবীর’ তাঁকে একেবারে বলিউডের শীর্ষ সারিতে পৌঁছে দেয়। ৬৪ বছরের ফিল্মি ক্যারিয়ারে বক্স অফিসে ধর্মেন্দ্র দিয়েছেন ৭৫টি হিট সিনেমা, যা বলিউডের যেকোনো তারকার তুলনায় সর্বোচ্চ সাফল্য।
ধর্মেন্দ্রর ক্যারিয়ার দুই ভাগে বিভক্ত। প্রথমটি রোমান্টিক নায়কের আর দ্বিতীয়টি অ্যাকশন সিনেমার রাগী-মারকুটে হিরোর। ষাটের দশকের শেষ দিকে ‘বাজি’ বা ‘আঁখে’-এর মতো থ্রিলারধর্মী সিনেমায় ধর্মেন্দ্রকে দেখা যেতে শুরু করে। সত্তরের দশকে বদলে যায় হিন্দি সিনেমার গতিপথ। পর্দায় উঠে আসতে থাকে রাগী চরিত্র। ১৯৭১ সালে ‘মেরা গাঁও মেরা দেশ’-এ ডাকাতদের বিরুদ্ধে গ্রাম বাঁচানোর লড়াইয়ের গল্পে হাজির হয়ে তিনিও এ ট্রেন্ডে শামিল হন। ১৯৭৫-এ আসে ‘শোলে’। এ সিনেমা তাঁর মতো অনেক অভিনেতার জীবনের মাইলফলক। আশির দশকে পুরোপুরি অ্যাকশনধর্মী গল্পের দিকে ঝোঁকেন ধর্মেন্দ্র। কম বাজেটের অনেক হিট সিনেমার নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। এই তালিকায় রয়েছে ‘বদলে কি আগ’, ‘গুলামি’, ‘লোহা’, ‘এলান-এ-জঙ্গ’-এর মতো সিনেমা।
জীবনের শেষ দিকেও ধর্মেন্দ্র পর্দায় দেখিয়েছিলেন নিজের দাপুটে উপস্থিতি। ৮০-এর কোঠায় পৌঁছেও তিনি পর্দায় সক্রিয় ছিলেন। ‘রকি অউর রানি কি প্রেম কাহানি’, ‘তেরি বাতোঁ মে আইসা উলঝা জিয়া’ তার জলজ্যান্ত প্রমাণ। আগামী ২৬ ডিসেম্বর মুক্তি পেতে চলেছে শ্রীরাম রাঘবনের ‘ইক্কিস’, যা ধর্মেন্দ্রর শেষ সিনেমা হয়ে রয়ে যাবে ইতিহাসের পাতায়।