পঁচাত্তরের কোঠায় বয়স। শরীরটা আর সায় দেয় না আগের মতো। হাঁটতে কষ্ট হয়, মাঝে মাঝে বসে পড়েন ক্লান্ত হয়ে। তবু থেমে নেই আব্দুল বারিক প্রামাণিক। প্রতিদিন সকালেই হাতে লাঠি আর ছাতা নিয়ে মাঠে বেরিয়ে পড়েন গরু চরাতে। কারণ এটুকুই এখন তাঁর জীবনের শেষ ভরসা।
গতকাল শনিবার সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার বড়কুড়া গ্রামের রাস্তার পাশে দেখা যায় তাঁকে। পরনে নেভি ব্লু টি-শার্ট আর চেক লুঙ্গি। কাছেই তিনটি গরু ঘাস খাচ্ছিল। সেগুলোর দুধ বিক্রি করে যে সামান্য আয় হয়, তাতেই চলে বারিক প্রামাণিক ও তাঁর স্ত্রীর জীবন।
জীবনে অনেক কষ্ট করে সংসার টেনেছেন বারিক প্রামাণিক। বাবা আজিম প্রামাণিকের মৃত্যুর পর সব ভার এসে পড়ে তাঁর কাঁধে। এখন বয়স হয়েছে, তবু বিশ্রামের সুযোগ হয়নি।
তাঁর তিন সন্তান রয়েছে। কিন্তু বারিক প্রামাণিকের অভিযোগ, ‘ওরা নিজের সংসার নিয়াই ব্যস্ত। আমাগো দেখে না।’
সরকারি কোনো ভাতা বা সহায়তা পান না বারিক প্রামাণিক। ক্ষোভ ঝরে পড়ে তাঁর কণ্ঠে, ‘মেম্বার বইলা আছিল কার্ড করে দিব, দুই হাজার টাকা নিছে। কিন্তু এই পর্যন্ত কিছুই দিল না।’
স্ত্রীর নাম বা বয়স জিজ্ঞেস করলে স্মৃতি হাতড়ে খানিক চুপ থেকে বলেন, ‘নামটা ঠিক মনে নাই... বয়স যে কত!’
এই গ্রামের পথেই আরও অনেক বারিক প্রামাণিক হারিয়ে যাচ্ছেন দিনে দিনে। যাঁদের জীবনের গল্প রাষ্ট্রের কোনো খাতায় নেই, মেম্বারদের প্রতিশ্রুতির ফাঁকে আটকে আছে।
তবু বারিক প্রামাণিক থেমে যাননি। যত দিন শরীরে শক্তি আছে, তত দিন মাঠেই থাকবেন—লাঠি হাতে, গরুর পেছনে ছায়া হয়ে।