ছুরিকাঘাতে নিহত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্যর গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে চলছে মাতম। তাঁর মৃত্যুর খবর পেয়ে দলীয় নেতা-কর্মীরা এবং এলাকাবাসী তাঁর বাড়িতে জড়ো হচ্ছেন। সাম্যর মৃত্যু যেন কেউই মেনে নিতে পারছেন না।
নিহত ছাত্রদল নেতা সাম্য বেলকুচির সরাতৈল গ্রামের ফরহাদ সরদারের ছেলে। তাঁর মা কয়েক বছর আগে মারা গেছেন। চার ভাইয়ের মধ্যে তিনিই সবার ছোট।
গ্রামের বাড়িতে পরিবার, আত্মীয়স্বজন, দলীয় নেতা-কর্মীরা সাম্যর লাশের অপেক্ষায় রয়েছেন। আজ বুধবার এশার নামাজের পর সরাতৈল জান্নাতুল বাকি কবরস্তানে তাঁকে দাফন করা হবে। ইতিমধ্যে সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
ছাত্রদল নেতা সাম্য হত্যার প্রতিবাদে আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ ছাত্রদলের উদ্যোগে প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ হয়। মিছিলটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে ভাসানী মিলনায়তন চত্বরে এসে শেষ হয়।
প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য দেন জেলা ছাত্রদলের সভাপতি জুনায়েত হোসাইন সবুজ, সাধারণ সম্পাদক সেরাজুল ইসলাম সেরাজ, সাংগঠনিক সম্পাদক রিফাত রহমান সবুজ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল কায়েস, সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ ছাত্রদল নেতা জহুরুল ইসলাম, জুয়েল রানা প্রমুখ। বক্তারা সাম্য হত্যাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।
সাম্যর বড় চাচা কাউসার আলম জানান, সাম্য মেধাবী ছাত্র ছিলেন। সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া মোমোনা আলী বিজ্ঞান স্কুলের মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন। পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ঈদ ও বিশেষ অনুষ্ঠান ছাড়া সাম্য গ্রামের বাড়িতে খুব একটা আসতেন না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার পাশাপাশি ছাত্রদলের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে কাউসার আলম বলেন, ‘কী অপরাধ ছিল আমার ভাতিজার যে তাকে হত্যা করা হলো। এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। যারা এই হত্যার সাথে জড়িত, তাদের দ্রুত ফাঁসিতে ঝোলানো হোক। মা-হারা ছেলেকে এভাবে হত্যা করা হবে, কোনো দিন ভাবতেই পারিনি।’
বেলকুচি ধুকুরিয়াবেড়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুর আলম বলেন, ‘সাম্য মেধাবী ছাত্র ছিল। তাকে পরিকল্পিত হত্যা করা হয়েছে। তার এই মৃত্যু আমরা কেউ মেনে নিতে পারছি না। সে আমাদের এলাকার রত্ন ছিল। আমরা হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে কঠিন শাস্তি দাবি করছি।’
সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা মোস্তফা জামান বলেন, ‘সাম্যকে হত্যা করা হয়েছে পরিকল্পিতভাবে। তার মৃত্যুতে আমরা একজন মেধাবী ছাত্রদল নেতাকে হারালাম। এভাবে তার বিদায় হবে, কোনো দিন ভাবতে পারিনি। বিএনপির দলীয় নেতা-কর্মীরা শোকে স্তব্ধ। আমরা হত্যাকারীদের দ্রুত বিচার চাই। তা না হলে বিএনপির নেতা-কর্মীরা রাজপথে নামতে বাধ্য হবে।’
গতকাল মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকায় ছুরিকাঘাতে খুন হন সাম্য। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ছিলেন।
উল্লেখ্য, তাঁর বাড়ি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থানায়।