ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে হারিয়ে যাওয়ার ২০ বছর পরে পরিবারের সন্ধান পেলেন আছমা বেগম (২৮)। ময়মনসিংহ জেলার 'ফুলপুর হেল্প লাইন' নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে পোস্টের মাধ্যমে এ সন্ধান মেলে।
জানা যায়, সৎ মায়ের নির্যাতনে ৭ বছর বয়সে ঢাকায় আসেন ময়মনসিংহের আছমা বেগম (২৮)। শুরু করেন গৃহকর্মীর কাজ। সেখানেও চলে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন। নির্যাতন সইতে না পেরে কাজ বাদ দিয়ে গার্মেন্টসে কাজ নেন আছমা। সেখানে সিরাজগঞ্জের এক ছেলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক থেকে বিয়ে হয়। বাবা–মায়ের পরিচয় না বলতে পারায় এখানেও চলে নানা কটু কথা, নির্যাতন। এর মাঝেও চালিয়ে যান সংসার, হন দুই সন্তানের মা। বাচ্চারা নানা বাড়িতে যেতে চাইলেও নিতে পারেননি আছমা। এ নিয়েও হতাশা ছিল।
সম্প্রতি বাড়ির সামনে টুলে বসে ফোন চালাচ্ছিলেন সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া শিক্ষার্থী রাকিবুল হাসান হৃষাদ। পাশেই আছমাসহ কয়েকজন নারী শ্রমিক মাটি কাটছিলেন। কাজ শেষ করে একজন নারী শ্রমিক হৃষাদের কাছে এসে জিজ্ঞেস করেন, 'বাবা, তোমার এই বড় ফোন দিয়া কি দেশ বিদেশের খবর নেওয়া যায়? ' হৃষাদ বললেন 'হ্যাঁ নেওয়া যায়'। তখন তিনি জানান, 'আমাদের সাথে আছমা নামের একজন কাজ করে। সে ২০ বছর আগে হারায় গেছে। ও জানে ওর বাড়ি ময়মনসিংহ। কিন্তু কেউ ওরে সাহায্য করে না। বাবা তুমি একটু ওর বাবার বাড়ি যাওয়ার ব্যবস্থা করে দাও।'
এই ফেসবুক পোস্ট দেখে আছমার ভাই আসমাকে চিনতে পারেন। পরে আসমার ভাই ও এলাকার ইউপি সদস্য হৃষাদকে মোবাইলে কল দেন। বিস্তারিত জানার পরে দেখা যায় এটিই আছমার পরিবার। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আসমার কথাও হয়েছে। তবে করোনা মোকাবিলায় চলমান কঠোর লকডাউনের কারণে তাঁকে বাড়ি আনা যাচ্ছে না। লকডাউন পরে তাঁকে বাড়িতে আনা হবে বলে জানান ময়মনসিংহ ফুলপুর উপজেলার রহিমগঞ্জের ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম সরকার।
আছমা আক্তার আজকের পত্রিকাকে বলেন, 'সৎ মায়ের অত্যাচারের জন্য আমাকে ৭ বছর বয়সে ঢাকা আসতে হয়েছিল। রাকিবুল হাসান হৃষাদ ভাইয়ের জন্য ২০ বছর পর আমি পরিবারের সন্ধান পেয়েছি।'
আছমার ভাই বলেন, আছমা ১৮-২০ বছর আগে হারিয়ে গিয়েছিল। ফেসবুকের মাধ্যমে তাঁকে খুঁজে পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে থানায়ও কথা হয়েছে। লকডাউন পরে বোনকে বাড়িতে নিয়ে আসব।