শুধু একটি সেতু—টাঙ্গন নদীর ওপর কেবল একটি সেতুর অভাবে আটকে আছে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়নের দশ গ্রামের মানুষের স্বপ্ন, জীবন ও জীবিকা। প্রতিদিন বাঁশের কাঁপা সাঁকো পেরিয়ে স্কুলে যাচ্ছে শিশু, হাসপাতালে যাচ্ছে রোগী, বাজারে যাচ্ছে কৃষিপণ্য। বছরের পর বছর শুধু প্রতিশ্রুতি, কিন্তু সেতু আর আসে না।
রোববার সকাল ৯টা। পালপাড়া ঘাটে জমেছে মানুষের ভিড়। কাঁধে ব্যাগ, হাতে বই, সন্তর্পণে পা ফেলে সাঁকো পার হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। কেউ সাইকেলে, কেউ মোটরসাইকেলে—সবারই চোখেমুখে উৎকণ্ঠা। ভারী যানবাহনের কোনো সুযোগ নেই। বর্ষায় সাঁকো ডুবে গেলে ভরসা শুধু নৌকা।
কৃষক রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের জমিতে প্রচুর সবজি হয়, কিন্তু শহরে ঠিকমতো নিতে পারি না। মাঝেমধ্যে নৌকা ভাড়া করেও পাঠাই। লাভ দূরের কথা, ক্ষতিই হয়।’
পাশ থেকে শহিদুল ইসলাম যুক্ত করেন, ‘নেতারা আসেন, ছবি তোলেন, বলেন এবার সেতু হবেই। ভোট চলে গেলে আর কাউকেই দেখি না। কিন্তু আমাদের যন্ত্রণাটা থেকেই যায়।’
শুধু কৃষক নন, বিপাকে পড়ে স্কুলগামী শিক্ষার্থী, অসুস্থ রোগী ও গর্ভবতী নারীরা। সামান্য বৃষ্টিতেই সাঁকো ভয়ানক পিচ্ছিল হয়ে ওঠে।
৭০ বছরের বৃদ্ধা অনিন্দ্য বালা জানালেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে এই বাঁশের সাঁকোই ভরসা। কত মানুষ যে পড়ে আহত হয়েছে, তার হিসাব নেই।’
এই সাঁকোই একমাত্র যোগাযোগমাধ্যম আকচা ইউনিয়নের পালপাড়া, ঝাকুয়াপাড়া, বাগপুর, সিংপাড়া, সর্দারপাড়া, চরঙ্গী, উত্তর ও দক্ষিণ বঠিনা গ্রামের প্রায় ২৫ হাজার মানুষের।
গত ২৬ বছরে বদলেছেন পাঁচ-ছয়জন সংসদ সদস্য ও জনপ্রতিনিধি। প্রতিবারই হয়েছে পরিদর্শন, মাপজোখ, ছবি তোলা। কিন্তু সেতুর কাজ আর শুরু হয়নি।
আকচা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান শিমলা রাণী বলেন, ‘বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে মানুষ যে দুর্ভোগে পড়ে, তা বলে বোঝানো যাবে না। আমরা বারবার জানিয়েছি। সরকার যেন দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করে।’
এ বিষয়ে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মামুন বিশ্বাস বলেন, ‘ঘাটটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সেতু নির্মাণের জন্য একনেকে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু হবে।’