গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে হাত-পায়ের রগ কেটে যুবলীগ নেতা মো. জাহিদুল ইসলামকে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে বাড়ি ফেরার পথে তাঁর হাত-পায়ের রগ কেটে দেয় অস্ত্রধারীরা। একইদিন দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
এ ঘটনায় এ পর্যন্ত সন্দেহভাজন ৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ স্থানীয় প্রশাসন। জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ করেছে আওয়ামী লীগ।
নিহত মো. জাহিদুল ইসলাম উপজেলার সোনারায় ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ও ওই ইউনিয়নের পশ্চিম বৈদ্যনাথ গ্রামের মো. আবুল হোসেন মিয়ার ছেলে।
সন্দেহভাজন আটক ৪ ব্যক্তি হলেন, সোনারায় ইউনিয়নের পূর্ব শিবরাম গ্রামের মো. মিজানুর রহমান (৩০), একই গ্রামের মো. মোশাররফ হোসেন (২৫), মধ্য শিবরাম গ্রামের মো. আবদুস সাত্তার মিয়া (৬৪) ও শিবরাম গ্রামের মোছা. এছমোতারা বেগম (৩৫)।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক মো. তারিকুল ইসলাম তারেক বলেন, ‘হাত-পায়ের রগ কাটা ছিল। এ ছাড়া পেটে ছুরির আঘাতসহ মাথায় লাঠির আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। পরে তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেই।’
নিহত মো. জাহিদুল ইসলামের বাবা আবুল হোসেন মিয়া কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘রোববার বিকেলে ছেলের সঙ্গে দেখা হয়নি। রাত ১০টার দিকে তাঁর মোবাইল ফোনে কল দিই, ছাইতাতোলা বাজারে আছে বলে জানায়। পরে বিছানায় শুয়ে পড়ি। রাত এগারোটার দিকে ছেলের বউয়ের মোবাইলে কল আসে। ছেলে আমার শাখামারা ব্রিজে অ্যাকসিডেন্ট করেছে বলে খবর পাই। অসুস্থ মানুষ তাই যেতে পারিনি। পরে শুনি ছেলেকে কারা জানি কুপিয়ে পাশের ধানখেতে ফেলে রেখে গেছেন। পরে হাসপাতালে মারা গেল।’ —বলেই হাউ-মাউ করে কেঁদে ওঠেন তিনি।
এদিকে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে পৃথক পৃথক বিক্ষোভ করেছে ইউনিয়ন ও উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সকল অঙ্গসংগঠন। বিক্ষোভ মিছিল শেষে তাঁরা বলেন, যুবলীগ নেতা মো. জাহিদুল ইসলামকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে।
এদিকে এই হত্যাকাণ্ডের পর থেকে উপজেলাজুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। তবে এখন পর্যন্ত নতুন করে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে পুলিশ, বিজিবি ও আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
জেলা পুলিশ সুপার মো. কামাল হোসেন নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘ঘটনার পরপরই আমরা অভিযান চালিয়ে ঘটনার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছি। তাদের আমরা জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রেখেছি। একই সঙ্গে আমরা হত্যার তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করছি। আশা করছি, অতি দ্রুত প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।’
এ বিষয়ে থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মিলন কুমার চ্যাটার্জি বলেন, বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে এ পর্যন্ত চারজনকে আটক করা হয়েছে। মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। হত্যাকাণ্ডের আসল তথ্য এখনোও জানা যায়নি। তবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে এ ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।