কুড়িগ্রামে সব নদ-নদীর পানি কমলেও ফুঁসছে ব্রহ্মপুত্র। টানা এক সপ্তাহ ধরে পানি বাড়তে থাকায় এই নদের অববাহিকার নিম্নাঞ্চলগুলোতে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে তিন উপজেলার চার ইউনিয়নের হাজারেরও বেশি পরিবার।
পানিবন্দী সব এলাকায় এখনো সরকারি সহায়তা পৌঁছায়নি। এতে করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও বিপাকে পড়েছেন। এলাকার দুর্দশাগ্রস্ত মানুষদের সাহায্য দিতে না পেরে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন উলিপুর উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধিতে সদরের যাত্রাপুর, উলিপুরের বেগমগঞ্জ, সাহেবের আলগা, হাতিয়া এবং চিলমারী উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়নের হাজারেরও বেশি পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। নিম্নাঞ্চলের আমনখেত ও কৃষিজমি পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার চরাঞ্চলে ঘরের ভেতরে পানি প্রবেশ করায় হাজারেরও বেশি পরিবারের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বাসিন্দাদের রান্নার চুলা ও শৌচাগার পানিতে নিমজ্জিত থাকায় বিড়ম্বনায় পড়েছে এসব পরিবারের কয়েক হাজার মানুষ।
এদিকে আরও দু-এক দিন পানি বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। পাউবোর নিয়ন্ত্রণকক্ষ বলছে, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত জেলার সব নদ-নদীর পানি কমতে থাকলেও ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এ সময় নদের পানি বেড়ে নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ২১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে এবং চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
নয়ারহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান জানান, তাঁর ইউনিয়নের হাতিয়া বকসি, কাজলডাঙ্গা, গয়নার পটল, উত্তর খাউরিয়ার চর পশ্চিমপাড়াসহ ইউনিয়নের প্রায় এক হাজার পরিবার পানিবন্দী। এসব পরিবারের অনেকের জীবন ঘরের ভেতরে চৌকিতে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। এদের খাদ্যসহায়তার প্রয়োজন হলেও বরাদ্দ না পাওয়ায় একটি পরিবারকেও খাদ্যসহায়তা দেওয়া সম্ভব হয়নি। ইউনিয়নের অন্তত দেড় শ হেক্টর জমির ছিটা আমন ও কালাইখেত পানিতে তলিয়ে পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে।
অসহায়ত্ব স্বীকার করে চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বলেন, ‘বন্যা আর ভাঙনে মানুষের অবস্থা খারাপ। কিন্তু কোনো সহায়তা দিতে পারি নাই। (খাদ্যসহায়তার জন্য) বলতে বলতে ক্লান্ত হয়ে গেছি। আমি নৌকা মার্কার চেয়ারম্যান। কার কাছে আবদার করব?’
উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের বালাডোবার চরের বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমগো অবস্থা খারাপ। ঘরে-বাইরে পানি। পানি বাড়তেই আছে।’
মুসার চরের বাসিন্দা মতিয়ার রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এবার নিয়া মৌসুমে চারবার পানি উঠল। ঘরের ভেতরে কোমরপানি। ক্যামনে ভালা থাকি। চরের সব পরিবারের ঘরে পানি। সাহায্য দরকার, কিন্তু সবাই সাহায্য পাইতাছে না। ত্রাণ বিতরণ নিয়া অনিয়ম হইতাছে।’
তিনি বলেন, ‘ইউনিয়নের ৪০০ পরিবারকে খাদ্যসহায়তা দেওয়া হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনকে শুকনো খাবার বিতরণের প্রয়োজনীয়তা জানানো হয়েছে।’
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি রেখেছি। খাদ্যসহায়তা বিতরণ চলছে। যেসব এলাকায় এখনো সহায়তা পৌঁছায়নি, সেসব এলাকায় আজকে (বৃহস্পতিবার) পৌঁছে যাবে। আমি সেভাবেই নির্দেশনা দিচ্ছি।’