পায়ে আলতা, খোঁপায় ফুল, লাল-হলুদের শাড়ি আর ঢোল মাদলের তালে ঝুমুর নাচ। এমন নানা আয়োজনে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সালন্দর ইউনিয়নের পাঁচপীরডাঙ্গা গ্রামে উদ্যাপিত হয়েছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কারাম উৎসব। গতকাল সোমবার রাতে শুরু হয় এর মূল উৎসব।
স্থানীয়রা জানায়, পরিবার ও নিজেদের সুখ-শান্তি কামনায় কারাম নামের একটি বিশেষ বৃক্ষের বন্দনায় সেই গাছকে ঘিরে চলে আরাধনা ও গান। এতে অংশ নেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ওরাঁও সম্প্রদায়ের তরুণ-তরুণীরা। সবাই গানের সুরে সুর মিলিয়ে গাছ দেবতার প্রার্থনায় মেতে ওঠেন।
আদিবাসী নেতা যাকোব খালকো বলেন, বংশ পরম্পরায় প্রতিবছর ভাদ্রের শেষে এবং আশ্বিনের শুরুতে তারা এ উৎসব পালন করেন। কারাম একটি গাছের নাম। ওঁরাও সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে এটি পবিত্র গাছ। মঙ্গলেরও প্রতীক। প্রতি বছর বংশপরম্পরায় উদ্যাপন করা হয় এ পূজা। এ উৎসব ঘিরে মুখর হয় আশপাশের এলাকা।
স্থানীয় রিপ্পুন মুর্মু বলেন, গাছ দেবতা যেন সামনের বছরে ভালো ফসল দেন সেই প্রার্থনা করা হয় এই উৎসবে। এই গাছকে ঘিরে চলে আরাধনা গান। গ্রামের নারীরা এ সময় শষ্যের বীজ বপন করে অপেক্ষা করেন অংকুরিত হবার। আর কারাম উৎসবের দিনই বীজ রূপ পায় চারায়। উৎসব হয় শষ্য দানার চারা আর কারাম গাছকে ঘিরে।
উৎসবের আয়োজক জানান, কারাম উৎসব বংশ পরম্পরায় চলে আসছে। কিন্তু উৎসবের মূল উপাদান কারাম গাছটি এখন বিলুপ্তির পথে। গাছটি সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
এর আগে ঐতিহ্যবাহী কারাম উৎসব পালন ও আদিবাসী মিলনমেলা উপলক্ষে সেখানে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রামকৃষ্ণ বর্মণ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হিসাব ও অর্থ) লিজা বেগম, ঠাকুরগাঁও সিনিয়র সহকারী জজ ও জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার এস এম শফিকুল ইসলাম, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান এ্যাড. অরুনাংশু দত্ত টিটো, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বেলায়েত হোসেন প্রমুখ।