চলছে শ্রাবণ মাস, ভরা বর্ষাকাল। সাধারণত এ সময় পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয়, যা ধান চাষের উপযোগী। তবে এ বছর টানা দাবদাহ আর অনাবৃষ্টিতে মাঠ শুকিয়ে গেছে। এখন চারা রোপণ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা। খরায় দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার বেশির ভাগ এলাকায় ফসলের মাঠ ফেটে চৌচির হয়ে গেছে।
এদিকে ভরা বর্ষাকালেও বৃষ্টিপাত না হওয়ায় আমন চাষে সময়মতো জমিতে হাল দিতে না পেরে এবং চারা রোপণ করতে না পারায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকেরা। তবে কেউ কেউ শ্যালো মেশিন চালু করে সেচ দিচ্ছেন। এতে উৎপাদন খরচ বাড়ছে।
এদিকে কিছু সেচ পাম্প চালু হলেও সরকারিভাবে বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে বেশি টাকা পানির দাম নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন কৃষকেরা। এতে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে তাঁদের।
উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় চলতি মৌসুমে ১৮ হাজার ১৯০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ৪ হাজার ৬৫৫ হেক্টর জমিতে রোপা আমন রোপণ করা হয়েছে। এ বছর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯০ হাজার ৭৯০ মেট্রিকটন।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, যেসব জমিতে পানি ছিল, বৃষ্টি না হওয়ায় সেসব জমিও এখন ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। খাঁ-খাঁ করছে ফসলের মাঠ। সেচ দিয়ে কিছু কিছু এলাকায় ধান রোপণ করলেও অনাবৃষ্টিতে টানা খরা আর প্রখর রোদে মাটি শুকিয়ে গেছে। রোপণ করা ধানের গাছগুলোও পানির অভাবে বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। এমন খরার কারণে সেচ পাম্পের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে কৃষকদের। এতে কৃষকদের ধানের উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে। কিছু এলাকায় নালা ও পুকুরের পানি সেচ দেওয়াসহ শ্যালো মেশিনের পানি দিয়ে সামান্য পরিমাণ জমিতে ধান রোপণ শুরু হয়েছে। তবে এর জন্য গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা।
উপজেলার বেশ কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বললে তাঁরা জানান, খরায় মাঠ ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। জমিতে হাল দেওয়া যাচ্ছে না। বৃষ্টি হলে এত দিন জমি তৈরি করা যেত, সময়মতো আমন চারা রোপণ করা সম্ভব হতো এবং খরচও বাঁচত।
উপজেলার এলুয়াড়ী ইউনিয়নের নবগ্রাম এলাকার কৃষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, অনাবৃষ্টির কারণে আমন চাষের আবাদ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ার ফলে জমিতে সম্পূরক সেচের মাধ্যমে আমন ধানের চারা রোপণ করতে হচ্ছে। তিনি তিন বিঘা জমিতে চারা রোপণ করেছেন। প্রতি বিঘা জমিতে পানি সেচ দিতে খরচ নিচ্ছে ৩ হাজার টাকা। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে।
একই এলাকার কৃষক এমাজ উদ্দিন বলেন, এ বছর বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। তাই আমন ধান আবাদে অনেকটা সেচনির্ভর হতে হচ্ছে। শ্যালো মেশিন দিয়ে জমিতে সেচ এবং চাষ করতে গিয়ে আমাদের খরচ অনেক বেড়ে যাচ্ছে।
দিনাজপুর জেলা আবহাওয়া কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. তোফাজ্জল হোসেন জানান, এখন কিছু কিছু এলাকায় হালকা বৃষ্টি হচ্ছে। তবে আগস্টের প্রথম সপ্তাহের শেষ থেকে পর্যায়ক্রমে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীর মো. আল কামাহ্ তমাল বলেন, আমনখেতে সেচ কার্যক্রমের জন্য উপজেলার সব গভীর ও অগভীর নলকূপ চালু করার জন্য বলা হয়েছে। সরকারিভাবে পানির খরচ ধরা হয়েছে ঘণ্টায় ১৩০ টাকা।
উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা সাহানুর রহমান বলেন, সম্পূরক সেচ চালু করতে ইতিমধ্যে বরেন্দ্রকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। উপজেলায় ইতিমধ্যে ৪ হাজার ৬৫৫ হেক্টর জমিতে চারা রোপণ করা হয়েছে। আমন রোপণের এখনো যথেষ্ট সময় আছে। কারণ আমাদের এলাকায় সুগন্ধি ধান চাষ বেশি হয়। এই ধান লাগানো যাবে ২০ আগস্ট পর্যন্ত। তাই তেমন সমস্যা হবে না।