পদ্মার বুকে সারি সারি চলছে ১৫টি নৌকা। নৌকাগুলোতে টাঙানো হয়েছে নানা রঙের নিশানা। প্রথম নৌকায় নিশানাগুলোর সামনে টাঙানো হয়েছে বাংলাদেশের পতাকা। প্রত্যেকটি নৌকারই রয়েছে আলাদা আলাদা নাম। সামনের নৌকাটির নাম ‘বুদ্ধ নাটক’ এবং সঙ্গে বহন করছে শেখ মুজিবুর রহমানের একটি প্রতিকৃতি। বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এভাবেই আজ শনিবার রাজশাহীর পদ্মা নদীতে বাংলা নাট্যের নৌযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
নৌকাগুলোতে যারা সওয়ারি হয়েছে সবাই সাংস্কৃতিক কর্মী। লাল নীল নিশানার নৌকাগুলো যখন একসঙ্গে ছুটে যাচ্ছিল, তখন রঙিন হয়ে ওঠে পদ্মা। ফুটে ওঠে আবহমান বাংলার শাশ্বত রূপ। নগরীর আলুপট্টি বটতলার পদ্মার পাড় থেকে বেলা ১১টার দিকে জাতীয়সংগীত গেয়ে নৌযাত্রাটি শুরু হয়। যাত্রাপথে নৌকাতেই নেচেগেয়ে সবাইকে মাতিয়ে রাখেন সাংস্কৃতিক কর্মীরা। এই নৌবহর দেখতে পদ্মার তীরে ভিড় করে নানা বয়সী মানুষ।
‘হাতের মুঠোয় হাজার বছর আমরা চলেছি সামনে’- স্লোগান সামনে রেখে নৌবহরটি দুপুর ১২টার দিকে বড়ালের মোহনায় পৌঁছায়। সেখানে চারঘাট গ্রাম থিয়েটারের সদস্য এবং সাংস্কৃতিক কর্মীরা তাঁদের স্বাগত জানান। পরে চারঘাট পদ্মা বড়াল থিয়েটারের ইলামিত্র মঞ্চ থেকে সাংস্কৃতিক অভিযাত্রায় একটি শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। এটি উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে উপজেলা পরিষদের হলরুমে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।
আলোচনা সভা অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, ‘বিগত প্রায় চার দশকের বেশি সময় ধরে দেশব্যাপী বাংলার ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করে আসছে বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার। আমাদের উদ্দেশ্য বাঙালির হাজার বছরের অসাম্প্রদায়িক সাংস্কৃতিক চেতনাকে সুসংহত করে ভবিষ্যতের অভিসারী করা। তারই অংশ হিসেবে এই নৌযাত্রা চারঘাট এসেছে। পর্যায়ক্রমে দেশের সব জায়গায় এই সাংস্কৃতিক অভিযাত্রা করা হবে। এটি আমাদের হাজার বছরের লোকসংস্কৃতিকে গণমানুষের কাছে পৌঁছে দেবে।’
আলোচনা সভা শেষে বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও লোক গবেষক কাজী সাঈদ হোসেন দুলাল, চারঘাট পদ্মা বড়াল থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক ও সদস্য আজমল হকের মৃত্যুতে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মাথাল রাজশাহীর পরিবেশনায় গম্ভীরা, গ্রাম থিয়েটারের পরিবেশনায় আলকাপ রঙ্গরস এবং চারঘাট বড়াল থিয়েটারের পরিবেশনায় মাদার অবলম্বনে বহুরূপে আসব ফিরে ও মনসামঙ্গল অবলম্বনে নীলমণি পরিবেশিত হয়।