মোহাম্মদ আলী পেছনে একজনকে বসিয়ে মোটরসাইকেল স্টার্ট দেন বিকেল ৫টায়। বগুড়া থেকে ১১৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে রাজশাহী এসে পৌঁছান বৃহস্পতিবার রাত ৯টায়। পথে যেখানেই পুলিশের চেকপোস্ট দেখেছেন, সেখানেই ভিন্নপথে সেই চেকপোস্ট পার হয়েছেন।
এভাবেই বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশের দুদিন আগেই সমাবেশস্থলে এসে পৌঁছেছেন বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলা শ্রমিক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ আলী। বাস মালিকদের ডাকা পরিবহন ধর্মঘটের কারণে মোহাম্মদ আলীর মতো শত শত নেতা কর্মী বিভিন্ন উপায়ে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের জন্য রাজশাহী আসছেন। তবুও পথে বাধা পড়ছে।
নওগাঁ সদর থেকে ১২ জনের একটি দলের সঙ্গে এসেছেন বৃদ্ধ মো. আবুজার (৬৬)। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৭টায় নওগাঁ থেকে তারা রওনা দেন রিকশায় চড়ে। বান্দাঘরা এলাকায় এসে রিকশা থেকে নেমে সিএনজিতে ওঠেন। এরপর বাগমারায় এসে নামেন। এখানে ওঠেন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায়। বাগমারা থেকে মোহনগঞ্জ আসার পর আবার সিএনজিতে ওঠেন।
আবুজার বলেন, ‘এভাবে কাটা কাটা গাড়িতে আইসব্যারকালেও পুলিশ দুজাগায় বাধা দিয়েছে। জিজ্ঞেস করে, কোথায় যাবা? সত্যি কথাই বলেছি যে রাজশাহীর মিটিংয়ে যাচ্ছি। তখন পুলিশ বলে, যাওয়া চলবে না। আমরা বলেছি, যাবই। আটকাতে পারবেন না। তখন পুলিশ ছেড়ে দিয়েছে।’
পাশ থেকে নিতপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি শফিকুল ইসলাম জানালেন একটু ভিন্ন কথা। তার দাবি, তারাও যখন নছিমনে চড়ে আসছিলেন তখন পুলিশ পথ আটকে জিজ্ঞেস করেছে তারা কোথায় যাবেন। নেতা কর্মীরা রাজশাহীর সমাবেশে আসছেন জানালে পুলিশ বলেছে, যেতে দেওয়ার জন্য তো আমরা এখানে বসিনি। শফিকুল বলেছেন, তারা যাবেনই। তখন পুলিশ একটু পাশে ডেকে নিয়ে বলেছে, যাবা যখন যাও, আমাদের চা-টা খাওয়াও। শফিকুল তখন পুলিশের হাতে ৫০০ টাকা ধরিয়ে দিয়েছেন।
তবে থ্রি-হুইলারে আসার সময় পুলিশ রাজশাহীর প্রবেশমুখ কাটাখালী এলাকায় নামিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ করলেন নাটোরের সিংড়া উপজেলার বেলোয়া গ্রামের বাসিন্দা আকবর আলী। তিনি বলেন, ‘আমরা ১৬ জনের একটা দল ছিলাম। সবাইকে পুলিশ নামিয়ে দিয়েছে। পরে প্রায় ১০ কিলোমিটার আমরা পায়ে হেঁটে সমাবেশস্থলে এসে পৌঁছেছি।’
বিএনপির সমাবেশের আগে সাধারণ মালিকের পাশাপাশি সরকারি বিআরটিসি বাসও বন্ধ রয়েছে। তবে চলাচল করছে ট্রেন। একটি কমিউটার ট্রেনে চড়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে এসেছেন সোনাইচণ্ডিহাট এলাকার বাসিন্দা ও ওয়ার্ড বিএনপির প্রচার সম্পাদক মজিবর রহমান। ট্রেনের ভেতরে এবং স্টেশনে পুলিশ রাজশাহী যাওয়ার কারণ জানতে চেয়েছে।
মজিবর বলেন, ‘রাজশাহীতে বিএনপির সমাবেশে যাচ্ছি বললে পুলিশ বলেছে যেতে দেওয়া হবে না। আমি বলেছি, আমি যাবই। টিকিট কেটেছি, আমি যাব। কেউ আটকাতে পারবে না। তখন আর পুলিশ ঝামেলা করেনি।’ তিনি বলেন, ‘বিএনপি তিন ঘণ্টার একটা সমাবেশ করার অনুমতি পেয়েছে। কিন্তু বাস বন্ধ করে দেওয়ার কারণে এই সমাবেশ তিন দিনের হয়ে গেছে। তিন দিন আগে থেকেই নেতা কর্মীরা এসে একত্রে থাকছে।’
আরও পড়ুন: