মাংস ছাড়া ভাত খেতেন না নিহত ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য। পড়ালেখা শেষ করে বিদেশে চাকরি করার ইচ্ছা ছিল তাঁর। এর আগেই দুর্বৃত্তদের হামলায় মৃত্যুপথযাত্রী হলেন তিনি।
২০১৫ সালের অসুস্থ হয়ে মারা যান সাম্যর মা। সাম্য তখন ছোট ছিলেন। সাম্যকে দেখাশোনা করতে তাঁর বড় ভাই শহীদুল ইসলাম চাচাতো বোনকে বিয়ে করেন। সাম্যরা চার ভাই তখন একই সঙ্গে থাকতেন। সাম্যর মা যখন মারা যান, তখন তাঁর বাবা বিদেশে ছিলেন। ২০১৭ সালে সাম্যর বাবা বিদেশ থেকে বাড়ি আসেন। ২০১৮ সালে দ্বিতীয় বিয়ে করেন তিনি।
এরপর সাম্যর ভাইয়েরা যখন চাকরিতে প্রবেশ করেন, তখন সংসার পৃথক হয়ে যায়। পরে সাম্য কিছুদিন বাবার সঙ্গে থাকেন। ২০২৩ সালে সাম্য আরেক ভাই শরীফুল ইসলামের বাড়িতে এসে ওঠেন। এরপর কলেজের হোস্টেলে থাকা শুরু করেন।
এদিকে সাম্য হত্যার পাঁচ দিন পরও মাতম থামেনি পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের। পড়ালেখা শেষ করে সাম্যর বিদেশে যাওয়ার কথা ছিল। তাঁর সেই স্বপ্ন সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে শেষ হয়ে গেল।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটি পেলেই সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে ছুটে আসতেন সাম্য। আত্মীয়স্বজন, বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করে আবার চলে যেতেন। এলাকার মানুষ তাঁর এই মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না।
উপজেলার ধুকুরিয়াবেড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সাম্য সরাতৈল গ্রামের সন্তান। এই পরিবার একটি শিক্ষিত পরিবার। শুধু শিক্ষিত বললে হবে না, একটি সুশিক্ষিত পরিবার। কারও সঙ্গে কোনো দিন ঝগড়া-বিবাদ হয়নি। সাম্য মানুষের সেবা করার জন্য রাজনীতিতে যোগ দেয়। মেধাবী ছাত্র ছিল সাম্য। সাম্যকে যারা হত্যা করেছে, তাদের চরম শাস্তি দাবি করছি।’
সাম্যর চাচা কাউসার আলম বলেন, ‘সাম্য মেধাবী ছাত্র ছিল। ভাত-মাংস ছিল তার প্রিয় খাবার। মাংস ছাড়া অন্য কিছু খেত না। মা মারা যাওয়ার আগেই থেকে তার এ অভ্যাস ছিল। তার বড় ভাই যখন আমার মেয়েকে বিয়ে করে, তখন সাম্য তার কাছে থেকেই বড় হয়। প্রতিদিন গরু অথবা মুরগির মাংস দিয়ে ভাত দিতে হতো সাম্যকে। আমার মেয়ে তা-ই করত। সাম্যর স্বপ্ন ছিল বিদেশে যাবে। ওর চাচাতো-ফুফাতো ভাইয়েরা বিদেশে থাকে। পড়ালেখা শেষ করে সাম্যও যেতে চেয়েছিল। কিন্তু এভাবে তার মৃত্যু হবে কোনো দিন ভাবতে পারিনি। সরকারের কাছে দাবি করব, দ্রুত হত্যাকারীদের বিচার করা হোক। তাহলে আমার সাম্যর আত্মা শান্তি পাবে।’