বান্দরবান কর্মরত অবস্থায় সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাসিন্দা সেনা সদস্য শিমুল আহমেদ (২৮)। ছুটি নিয়ে বাড়ি যাওয়ার কথা ছিল তাঁর কিন্তু আজ বুধবার বান্দরবানের রামু (কর্মস্থল) থেকে তাঁর মরদেহ নেওয়া হবে বাড়ির উদ্দশ্যে। এদিকে শিমুলের মৃত্যুর খবরে পরিবারে মাতম চলছে। বাবা–মা, স্ত্রীসহ ৬ বছর বয়সী মেয়ের আর্তনাদে ভারী হয়ে আছে চারপাশের পরিবেশ।
রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় আড়ানী ইউনিয়নের ঝিনা মিস্ত্রীপাড়া গ্রামে নিহত সেনাসদস্যের বাড়িতে সরেজমিনে দেখা যায়, নির্বাক চেয়ে আছেন বাবা তাহেদ আলী। বুক চাপড়িয়ে কেঁদেই চলেছেন মা পপি বেগম। বিলাপ করছে, ‘আমারে ফেলা থুইয়া অকালে চলে গেলি বেটা। তুই না বলেছিলি, ছুটি পেলেই বাড়িতে আসবি।’ কাঁদছেন ২ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী সম্পা আকতার। জানতে চাইলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘মোবাইলে তাঁর সাথে আমার শেষ কথা হয়েছিল সোমবার রাতে। বলেছিল—মামণি স্বর্ণালীর দিকে খেয়াল রেখ। সে যেন দুষ্টামি না করে। তাঁর জন্য নতুন ডিজাইনের পোশাক নিয়ে আসব।’ নতুন পোশাকের অপেক্ষায় থাকা ৬ বছর বয়সের একমাত্র মেয়ে স্বর্ণালী ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলছে—‘আমার পোশাক নিয়ে আসবে কে?’
গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে বান্দরবানের থানচি-আলীকদম সড়কের ২৮ কিলোমিটার এলাকায় জিপ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে ঘটনাস্থলে নিহত হন সেনা সদস্য শিমুল আহমেদ। আহত হন আরও তিনজন সেনা সদস্য। আহতেরা হলেন-গাড়িচালক কর্পোরাল প্রবীর, সেনা সদস্য ফরহাদ ও সেনা সদস্য ইব্রাহীম। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন থানচি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মহিউদ্দিন।
মাসুদ রানা আরও বলেন, ‘প্রথমে হেলিকপ্টারে মরদেহ বাড়িতে পৌঁছানোর কথা থাকলেও আবহাওয়া খারাপের কারণে সেনাবাহিনীর গাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার কথা হয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার ভোরে মরদেহ পৌঁছাবে বলে ধারণা করছি। মরদেহ দাফন করা হবে নিজ উপজেলার আড়ানি ইউনিয়নের ঝিনা মিস্ত্রীপাড়া গ্রামের কবরস্থানে।’
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, শিমুল আহমেদ ২০১০ সালে এসএসসি পাস করেন। ২০১৪ সালের জুলাই মাসে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। দয়ারামপুর ক্যান্টনমেন্ট থেকে বদলি হয়ে বান্দরবানের রামু ক্যান্টনমেন্টে কর্মরত ছিলেন। তাঁর ছোট এক ভাই ও বোন রয়েছে। ভাই সোহাগ আহম্মেদ কৃষিকাজ করেন। বোন তামান্না খাতুন স্থানীয় স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে লেখাপড়া করে।
আড়ানী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রভাষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দুর্ঘটনায় আমার ইউনিয়নের একজনের মৃত্যু হয়েছে জানতে পারি। অন্য এলাকার তিনজন সেনা সদস্য আহত হয়েছে। নিহতের মরদেহ বাড়িতে পৌঁছায়নি। পৌঁছালে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।’