রাজশাহীতে দুই দিনের ব্যবধানে দুই শিশুর মৃত্যুর সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ খুঁজে পায়নি রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। একই সঙ্গে অজানা কোনো ভাইরাস যুক্ত বরই খাওয়ার কারণে মারা গেছে ধারণা করা হলেও সে সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে সংস্থাটি জানায়, কোনো খাদ্যদ্রব্যের সঙ্গে দুই শিশুর মৃত্যুর কারণ নেই।
তবে আইইডিসিআর ধারণা, শিশু দুইটির মৃত্যু হয়েছে ‘মেনুভো ককটাল মেনুজেটিস’ নামের একটি ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে। বিষয়টি নিশ্চিত না হলেও এক শিশুর মরদেহ থেকে নেওয়া রক্তের নমুনা বিশ্লেষণ করে এই ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ধারণা করা হচ্ছে।
আজ সোমবার আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এক শিশুর নমুনা পেয়েছিলাম। সেটা পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা গেছে, বরই কিংবা অন্য কোনো খাদ্যদ্রব্যের সঙ্গে শিশু দুটির মৃত্যুর কারণ নেই। রক্তের নমুনা বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘মেনুভো ককটাল মেনুজেটিস’ নামের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে শিশু দুইটির মৃত্যু হয়েছে। তবে এটাও প্রমাণিত নয়, এটা সন্দেহ করা হচ্ছে। কোনো খাবার নয়, আশপাশের পরিবেশ এই ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটিয়ে থাকে।’
গত ১৭ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) মারা যায় শিশু মুফতাউল মাশিয়া (৫)। এর আগে ১৪ ফেব্রুয়ারি একই লক্ষণ নিয়ে মারা যায় ছোট বোন মুনতাহা মারিশা (২)।
দুই শিশুর বাবার নাম মনজুর রহমান (৩৫)। তিনি রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের গণিত বিভাগের প্রভাষক। তাঁর স্ত্রী পলি খাতুন (৩০) গৃহিণী। তাঁদের বাড়ি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার চুনিয়াপাড়া গ্রামে। তবে তাঁরা চারঘাটের সারদায় ক্যাডেট কলেজের কোয়ার্টারেই থাকেন।
জানা যায়, ১৩ ফেব্রুয়ারি সকালে কোয়ার্টারের কাজের বুয়া ক্যাম্পাসের গাছ থেকে বরই কুড়িয়ে এনে দুই শিশুকে খেতে দিয়েছিলেন। না ধুয়েই ওই বরই খেয়েছিল দুই শিশু মারিশা আর মাশিয়া। পরদিন (১৪ ফেব্রুয়ারি) মারিশার জ্বর আসে। বারবার পানি খাচ্ছিল। দুপুরের পর শুরু হয় বমি। রাজশাহী সিএমএইচে নেওয়ার পথেই তার মৃত্যু হয়।
১৬ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) মাশিয়ারও জ্বর আসলে শুরু হয় বমি। তাকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরে সিএমএইচে নেওয়া হয়। তারও শরীরে ছোপ ছোপ কাল দাগ উঠতে শুরু করে। তা দেখে চিকিৎসকেরা মাশিয়াকে রামেক হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। রাতে রামেক হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়।
পরদিন (১৭ ফেব্রুয়ারি) শনিবার বিকেলে মাশিয়াও মারা যায়। তার মরদেহ থেকে রক্ত ও পাকস্থলী থেকে খাবারের নমুনা সংগ্রহ করেন চিকিৎসকেরা। ছোট মেয়ে মারিশার লাশ আগেই দাফন করায় কোনো নমুনা সংগ্রহ করা যায়নি। আর তখন ওই দুই শিশুর বাবা–মাকে হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা হয়। পরে স্বজনদের মাধ্যমে মাশিয়ার লাশ গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়।