অভাবের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। তবুও দমে যাননি রাজশাহীর তানোরের সন্তান এস এম রায়হান। দারিদ্র্যকে হার মানিয়ে সফলতার মুখ দেখেছেন তিনি। সদ্য সমাপ্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় তৃতীয় স্থান অধিকার অর্জন করেছেন তিনি।
রায়হান তানোর পৌরশহরের ভাতরণ্ড এলাকার হাসিনা বিবি ও আইনাল হকের ছেলে। মা গৃহিণী এবং বাবা একজন ভূমিহীন বর্গাচাষি কৃষক।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টানাটানির সংসারে তিনবেলা খাবারই জোটে না। পরিবার নিয়ে থাকার জায়গাটুকুও নেই। বাবা অসুস্থ হওয়ার পর সংসার দেখাশোনার দায়িত্ব রায়হানের কাঁধেই ওঠে। সঙ্গে রয়েছে নিজের পড়ালেখার খরচ। তবে এত কিছুর পরও দমে যাননি রায়হান। রাবির ‘এ’ ইউনিট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় স্থান অর্জনের পাশাপাশি রাবি ‘সি’ ইউনিটে সবাইকে তাক লাগিয়ে তৃতীয় স্থান অর্জন করেছেন।
ছেলের এমন সাফল্যে বাবা আইনাল হক বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ, তবে আমার ছেলেটা ছোট থেকেই খুব মেধাবী। তাকে লেখাপড়ার জন্য কখনো বলতে হয়নি। আমার ১ ছেলে ও ১ মেয়ে। তার মধ্যে রায়হান ছোট।’
রায়হান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার বাবা একজন ভূমিহীন বর্গাচাষি। তাই আমাদের সংসারে দারিদ্র্য একটা নিত্য সঙ্গী ছিল। আমার বাবা একজন অসুস্থ মানুষ তাই সংসার দেখাশোনার দায়িত্ব আমার কাঁধেই ছিল। এর মধ্য দিয়েই আমি আমার পড়াশোনা মোটামুটি চালাতে থাকি। হঠাৎ করে চলে আসা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়েও আমার মা-বাবা আমাকে রাজশাহীতে পাঠায়। সেখানেও কয়েক মাসের চরম দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে অবশেষে আমি আল্লাহর অশেষ রহমতে সফল হতে পেরেছি।’
রায়হান আরও বলেন, ‘পড়ার ইচ্ছা থাকলেও অভাব কোনো বাধা নয়। শিক্ষকদের কাছ থেকে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন দেখেছি। এ জন্য আমার শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষকদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। পড়ালেখা শেষ করে শিক্ষা ক্যাডারে আত্মনিয়োগ করতে চাই।’
এস এম রায়হান ২০১৯ সালে স্থানীয় আকচা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ২০২১ সালে সরকারি আব্দুল করিম সরকার কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে এইচএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়।