বিদেশে পাঠানোর কথা বলে পাবনা থেকে কৌশলে ঝিনাইদহে নিয়ে এক যুবককে অপহরণ ও হত্যার দায়ে চারজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাঁদের ২৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ১ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পাবনার বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আহসান তারেক এই রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় দুজন আসামি উপস্থিত ছিলেন। বাকি আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলার লঘু নন্দনপুর গ্রামের নুরু জোয়ার্দারের ছেলে সবুজ (৪২) ওরফে দাদা ভাই ওরফে বকুল, কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার বনগ্রাম পূর্বপাড়া গ্রামের মোবারক হোসেনের ছেলে আবুল কালাম (৬৪), নিহাল বিশ্বাসের ছেলে আজাদ হোসেন (৫৯) এবং একই এলাকার খলিল হোসেন (৪৮)।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ঝিনাইদহ থেকে পাবনার বেড়া উপজেলার রামনারায়ণপুরের রশিদ সিকদারের (৫৫) বাড়িতে দিনমজুরের কাজে যান সবুজ। এর মধ্যে ওই পরিবারের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে তোলেন তিনি। সম্পর্কের একপর্যায়ে ২০০৯ সালের ১৪ জুলাই রশিদকে বিদেশে পাঠানোর কথা বলে বাড়ি থেকে নিয়ে যান সবুজ। পরদিন রশিদের বাড়ির লোকজন তাঁর খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন সবুজ তাঁকে অপহরণ করেছেন। মুক্তিপণ হিসেবে ৫ লাখ টাকা দাবি করেন সবুজ।
পুলিশ বলছে, এ বিষয়ে বেড়া থানায় একটি অভিযোগ দেন রশিদের শ্যালক বাহের মণ্ডল। অভিযোগের সূত্র ধরে সবুজকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি স্বীকার করেন যে মুক্তিপণের টাকা দিতে অস্বীকার করায় রশিদকে হত্যা করে লাশ পদ্মা নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে।
বাদীপক্ষের আইনজীবী দেওয়ান মজনুল হক বলেন, পুলিশ লাশ উদ্ধার করতে না পারায় আসামিদের বিরুদ্ধে শুধু অপহরণের মামলা দায়ের করা হয়। দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০১০ সালের ১১ জানুয়ারি ৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ১১ জনের সাক্ষী শেষে আজকে রায় ঘোষণা করা হলো।
রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, যেহেতু লাশ উদ্ধার হয়নি, এ জন্য হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী অপহরণ মামলায় বিচার হয়েছে। এই রায়ের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতীয়মান হয়েছে।
তবে অসন্তোষ প্রকাশ করে আসামিপক্ষের আইনজীবী তৌফিক ইমাম খান বলেন, ‘এই রায়ের মাধ্যমে আমার মক্কেল ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করব।’
আদালতে আসামিদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী তৌফিক ইমাম খান ও মকিবুল আলম বাবলা এবং রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) দেওয়ান মজনুল হক।