চলতি বছরের গত ২১ নভেম্বরের ভূমিকম্পে নারায়ণগঞ্জে অন্তত ১৮টি ক্ষতিগ্রস্ত ভবন চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব স্থাপনার কোনোটিতে দেয়ালে ফাটল, আবার কোনোটিতে পিলারে ফাটল, আবার কোনোটি হেলে পড়েছে। ফলে ভবনগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও জেলা প্রশাসন। এগুলোর বাসিন্দাদের অন্যত্র সরে যেতে বলা হয়েছে। সে অনুযায়ী সরে যেতে শুরু করেছেন ভবনমালিক ও ভাড়াটেরা।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রায় ২০ লাখ মানুষের বসবাস। কাজের খোঁজে প্রতিনিয়ত দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এখানে আসছেন মানুষ। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার আবাসন নিশ্চিতে গড়ে উঠছে একের পর এক বহুতল ভবন। সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের পর এসব ভবনের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
নারায়ণগঞ্জ ডেভেলপার অ্যাসোসিয়েশনের নেতা গোলাম সারোয়ার সাঈদ বলেন, বাড়ি তৈরির আগে সঠিকভাবে সয়েল টেস্ট করানো জরুরি। এসব ক্ষেত্রে রাজউকের চেয়ে মালিকদের দায় বেশি।
২১ নভেম্বরের ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত ১৮ ভবনের মধ্যে ফতুল্লার পাগলা বাজারের হাজী ইউনুস সুপার মার্কেটও রয়েছে। চারতলা ভবনটিতে ফাটল ধরেছে। একই এলাকার চারতলা হাজী মিছির আলী মার্কেটের বিমে ফাটল ধরেছে। ফতুল্লার আলীগঞ্জে হেলে পড়েছে আমির হামজার চারতলা ভবন, একই এলাকায় কামরুল হাসান নামের এক ব্যক্তির আরেকটি চারতলা ভবনও হেলে পড়েছে। নারায়ণগঞ্জ শহরের মিশনপাড়ায় দেয়ালে ফাটল ধরেছে নয়তলাবিশিষ্ট এস আহমেদ প্যালেসে। ফতুল্লার মাসদাইরে হেলে পড়েছে মো. ইউসুফের পাঁচতলা ভবন, একই এলাকায় মাহমুদা খাতুন নামের এক নারীর পাঁচতলা ভবনও হেলে পড়েছে।
সিদ্ধিরগঞ্জ হাউজিংয়ের ২ নম্বর রোডে হেলে পড়েছে দেলোয়ার হোসেন এবং সিদ্দিকুর রহমানের পৃথক পাঁচতলা ভবন। একই হাউজিংয়ের ৪ নম্বর রোডে হেলে পড়েছে আবুল কালামের পাঁচতলা এবং ইকবালের সাততলা ভবন। ৫ নম্বর রোডে হেলে পড়েছে সাজেদা বেগম ও শহীদুল ইসলামের পৃথক পাঁচতলা ভবন।
সিদ্ধিরগঞ্জের হীরাঝিল এলাকায় ছাদের প্যারাপেট ভেঙে পড়া ইসমাইল ভুঁইয়ার চারতলা এবং দেয়ালে ফাটল ধরা আলী আক্কাসের আটতলা ভবনও রয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনার তালিকায়। সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি এলাকায় ফাটল ধরেছে সাততলাবিশিষ্ট আদিবা টাওয়ারে। আদমজীনগরে হেলে পড়েছে নাহার মঞ্জিল এবং চঞ্চল মাহমুদের পাঁচতলা ভবন।
সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের পর ২৯ নভেম্বর এসব ভবনের বাসিন্দাদের সতর্ক করে রাজউক ও জেলা প্রশাসন। ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের বেশির ভাগই সিদ্ধিরগঞ্জে হওয়ায় প্রকৌশলীদের ধারণা, এই অঞ্চলের মাটি অপেক্ষাকৃত নরম হতে পারে। একই সঙ্গে এসব ভবন সঠিকভাবে সয়েল টেস্ট করে নির্মাণ করা হয়েছে কি না, তাও যাচাই করা হচ্ছে।
সরেজমিনে সিদ্ধিরগঞ্জ হাউজিংয়ে গিয়ে দেখা যায়, হেলে পড়া ও ফাটল ধরা ছয়টি ভবনের মধ্যে চারটির বাসিন্দারা অন্যত্র সরে গেছেন। একটিতে বাড়িওয়ালা চলে গেলেও এক ফ্ল্যাটে ভাড়াটে রয়েছেন। অন্য ভবনে বাড়িওয়ালা থাকলেও ভাড়াটেরা সরে গেছেন।
একটি ভবনের বাড়িওয়ালার ছেলে নাহিয়ান বলেন, ‘রাজউক থেকে বলা হয়েছে বুয়েট থেকে পরীক্ষা করাতে। সেই পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ফি জমা দেওয়া হয়েছে। পরীক্ষার পর ঝুঁকিপূর্ণ বলা হলে চলে যাব।’ স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, বুয়েট থেকে পরীক্ষা করে ভবনগুলোতে বসবাসের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো উচিত।
রাজউকের অথরাইজড অফিসার রঙ্গন মণ্ডল বলেন, ‘১৮টি ভবন চিহ্নিত করে সেগুলো খালি করার অনুরোধ করেছি। যদি তাঁরা সিদ্ধান্ত না মানেন তাহলে পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে চিঠি দেওয়া হবে।’
নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রায়হান কবীর বলেন, ‘রাজউক ১৮টি ভবন সাময়িকভাবে খালি করার নোটিশ দিয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত জানানো হবে।’