হোম > সারা দেশ > মাগুরা

‘ভারতীয়’ নষ্ট বীজ লাগিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রীপুরের কৃষকেরা

ফয়সাল পারভেজ, মাগুরা

মাগুরার শ্রীপুরে পেঁয়াজের বীজ রোপণ করে ক্ষতির মুখে পড়েছেন উপজেলার শতাধিক কৃষক। কৃষকদের অভিযোগ, এই বীজ ‘ভারতীয় নকল’ বীজ। চলতি মৌসুমে উপজেলার সাত গ্রামের কৃষকেরা নানা জায়গা থেকে এই বীজ সংগ্রহ করেন। কিন্তু সেচ দেওয়ার পর পেঁয়াজের ছোট চারাগুলো মরে যায়। নকল বীজ যাঁদের থেকে কিনেছেন, তাঁদের অনেকে গা ঢাকা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এক বীজ বিক্রেতার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে মামলাও হয়েছে। সেই মামলা তদন্ত করছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা। 

জেলার শ্রীপুর উপজেলায় পেঁয়াজের আবাদ হয় সব থেকে বেশি। কিন্তু চলতি মৌসুমে শ্রীপুর উপজেলার সাতটি গ্রাম—জোকা, হোগলডাঙ্গা, আমলসার, চরমালাইনগর, মদনপুর, বড় উদাস ও গোয়ালপাড়ায় এবার পেঁয়াজ আবাদ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

শ্রীপুর কৃষি অফিসে পেঁয়াজের নকল বীজ বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন কয়েকজন কৃষক। এর মধ্যে উপজেলার চর জোকা গ্রামের স্থানীয় বীজ ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন মহম্মদপুরের শ্যামনগর গ্রামের আনোয়ার মৃধার কাছ থেকে প্রায় এক লাখ টাকার বীজ কেনেন। সেগুলো কৃষকের কাছে সরবরাহ করার পর দেখা যায় বীজগুলো অকার্যকর। এ জন্য আনোয়ারের নামে আদালতে প্রতারণার মামলা করেছেন আলাউদ্দিন। গত ৩০ জানুয়ারি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি করা হয়। 
অভিযোগের বিষয়ে জানতে আনোয়ার মৃধার মোবাইল নম্বরে কল করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।  

কৃষি কর্মকর্তা সালমা জাহান নিপা জানিয়েছেন, তাঁরা বীজের নমুনা সংগ্রহ করেছেন। এসব বীজের ৮০ শতাংশের উৎপাদন-ক্ষমতা নেই। যাঁরা খারাপ বীজ লাগিয়েছেন, তাঁদের অনেকেই আবার নতুন করে আবাদ করেছেন। তাই উৎপাদনে খুব একটা হেরফের হবে না। কিন্তু ক্ষতি যা হওয়ার সেটা কৃষকের হয়ে গেছে। কারণ দুই দফা তাঁদের বীজ কিনতে হয়েছে। 

সালমা জাহান বলেন, ‘এ বিষয়ে উপজেলার চরজোকা গ্রামের কৃষক আলাউদ্দিন আদালতে একটি মামলা করেছেন। সেটির তদন্ত করা হচ্ছে। আমরা নকল বা খারাপ বীজ ব্যবসায়ীদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছি। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের কৃষি বিভাগ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’  

শ্রীপুরের এসব গ্রামে গতকাল রোববার সরেজমিনে দেখা যায়, পেঁয়াজের অধিকাংশ মাঠে কোনো চারা গজায়নি। এক শতাংশ মাঠে পেঁয়াজের চারা হাতে গোনা ১০টিরও কম। মাঠের কিছু অংশে আছে পেঁয়াজের চারা আবার কোনো অংশে নেই।  যে অংশে চারা রয়েছে, সেখানে চারাগুলো মরে হলুদ হয়ে গেছে। 

শ্রীপুরের গোয়ালপাড়া গ্রামের পেঁয়াজচাষি অলিয়ার বিশ্বাস বলেন, ‘গত বছর আমার পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়েছিল। তা দেখে এবারও পেঁয়াজের আবাদ করি। এবার আমি ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা এলাকা থেকে ৪ হাজার ৬০০ টাকার ভারতীয় বীজ ক্রয় করি। গত মাঘ মাসে আমি বীজ পাতো দেই। এরপর মাঠে রোপণ করি। পৌষের মাঝামাঝি পেঁয়াজের চারা রোপণ করি। কিন্তু সেচ দেওয়ার পরপরই আমার পেঁয়াজের চারাগুলো বসে যায়। ৫৫ শতকের ক্ষেতে অধিকাংশ জমিতেই কোনো চারা না গজানোর ফলে আমি বিপাকে আছি। এ বছর আমার ২ লাখ টাকার পেঁয়াজে ক্ষতি হলো। গত বছর পেঁয়াজে সব খরচ বাদে আমার ২-৩ লাখ টাকা লাভ হয়েছিল।’

শ্রীপুর জোকা গ্রামের রহমান চাষি বলেন, ‘এবার ১৩০ শতকে পেঁয়াজের আবাদ করেছি। পেঁয়াজের বীজটা ছিল ভারতীয়। সেচ দেওয়ার পরই আর কোনো চারা গজায়নি জমিতে। ফলে পেঁয়াজ নিয়ে বিপাকে আছি।’ 

একই কথা জানিয়েছেন উপজেলার চরজোকা গ্রামের কৃষক আজাদ, রফিক, নজরুল, আতিয়ারসহ আরও অনেকে।

বীজ ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন বলেন, ‘আমি সততার সঙ্গে বীজের ব্যবসা করে আসছি দীর্ঘদিন ধরে। এবার চলতি মৌসুমে মাগুরা মহম্মদপুরের শ্যামনগর থেকে বীজ ব্যবসায়ী আনোয়ার মৃধার কাছ থেকে ৫২ কেজি বীজ ১ লাখ ৭১ হাজার টাকায় ক্রয় করি এবং এলাকার বিভিন্ন কৃষকের কাছে বিক্রি করি। পেঁয়াজের বীজে ধস নামায় এলাকার কৃষকদের চাপে পড়ি। ফলে আমি মহম্মদপুরের ওই বীজ ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে গত ৩০ জানুয়ারি একটি মামলা করি। যেটি এখন শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তদন্ত করছেন।’ 

শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সালমা জাহান নিপা আজকের পত্রিকাকে বলেন, মাগুরা জেলার মধ্যে শ্রীপুরে তুলনামূলক বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। সাধারণত ৬ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে চাষের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৫ হাজার ৯০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে।

মহম্মদপুরে গ্রামীণ ব্যাংকে অগ্নিসংযোগ

সালিসের মধ্যে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা, প্রতিপক্ষের বাড়িতে আগুন

মাগুরায় খালে ডুবে এক পরিবারের তিন শিশুর মৃত্যু

‘লালু বলে ডাক দিলেই ছুটে আসে বেজিটি’

ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে বিয়ে

মাগুরায় তেলবাহী ট্রাক ও বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে আহত ২০

টিসিবির ৭৮ টন চাল উদ্ধার

মাগুরার যুবকের বিয়েতে ২ সৌদি নাগরিক

মাগুরায় চুরির অভিযোগে যুবককে পিটুনি, হাসপাতালে মৃত্যু

চোখে টর্চের আলো ফেলায় ১ জনকে পিটুনি, হাসপাতালে মৃত্যু