লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে আওয়ামী লীগের দুপক্ষের সংঘর্ষে এক স্কুলশিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। ঘটনাস্থলে মোতায়েন রয়েছে বাড়তি পুলিশ। আজ শুক্রবার উপজেলার মিয়ারহাটে এ ঘটনায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন এলাকাবাসী।
ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনে দেড় মাসের শিশুসন্তানকে কোলে নিয়ে ছেলে হত্যার বিচারের দাবি জানিয়েছেন নিহত সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাসেলের মা ফাতেমা বেগম ও বাবা মনির হোসেন ভুট্টু ব্যাপারী। এ সময় তাঁরা হাউমাউ করে কেঁদে উঠে বারবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।
তাঁরা বলেন, ‘কী দোষ ছিল আমার ছেলে রাসেলের। সে তো কোনো রাজনীতি করে না। ঘটনার দিন সে বাবার খোঁজে মাছঘাটের দিকে যাচ্ছিল। মিয়ারহাট এলাকায় গেলে আওয়ামী লীগ নেতা শাহজালাল রাহুল ও তাঁর সমর্থকদের ছুরিকাঘাতে নিহত হয় রাসেল। এটি একটি পরিকল্পিতভাবে হত্যা।’ জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তাঁরা।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, শাহজালাল রাহুলের একটি সন্ত্রাসী বাহিনী রয়েছে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের দাপট দেখিয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। খাসজমি দখল, নারী কেলেঙ্কারি, ধর্ষণ ও চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্ম করে আসলেও কেউ তাঁর বাহিনীর ভয়ে মুখ খুলতে সাহস করেনি। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ ও চাঁদাবাজির অভিযোগে ডজনখানেক মামলাও রয়েছে বলে জানান বক্তারা।
শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বাজারের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে দক্ষিণ বাজারে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মনির হোসেন মোল্লা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিনসহ অনেকে।
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য বিস্তার, মাছঘাট দখল ও ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে শাহজালাল রাহুল ও নজরুল ইসলাম গ্রুপের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। গত বুধবার সকালে রায়পুর উপজেলার দক্ষিণ চরবংশীর মিয়ারহাটের রাহুল মাছঘাটে ইউপি সদস্য নজরুল ইসলামের ভাই বাবুল ব্যাপারীর সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতা শাহজালাল রাহুলের মাছঘাটের ম্যানেজার ফারুক ক্বারীর সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা ও কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে দুপক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
এর জেরে রাহুল ও নজরুল ইসলাম সমর্থকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ বেধে যায়। এ সময় রাসেল হোসেন নামে এক কিশোর ছুরিকাঘাতে নিহত ও আরও ১০ জন আহত হয়। এ ঘটনায় পরদিন রায়পুর থানায় নিহত রাসেলের মা ফাতেমা বেগম বাদী হয়ে শাহজালাল রাহুলসহ ৯ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় শাহজালাল রাহুলসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বর্তমানে তাঁরা কারাগারে রয়েছেন।