সাব্বির হোসেন (২১) ও আসলাম হোসেন (২১) দুই আপন মামাতো-ফুপাতো ভাই। এক পাড়ায় বসবাসের কারণে দুজনের শৈশব-কৈশোরে বেড়ে ওঠা এক সঙ্গেই। হয়ে উঠেছিলেন পরস্পর খুবই ভালো বন্ধু। পড়াশোনা করেছেন একই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। এক সঙ্গে পড়ছিলেন একই কলেজে। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস দুজন মারাও গেলেন একই সঙ্গে একই সড়ক দুর্ঘটনায়। যেন মৃত্যুকেও ভাগাভাগি করে বরণ করলেন তাঁরা। স্বজনেরা এই দুই ভাইকে দাফনও করলেন পাশাপাশি। এ ঘটনায় তাঁদের বাড়িতে চলছে মাতম।
নিহত সাব্বির উপজেলার শোমসপুর গ্রামের মো. আমিরুল ইসলামের ছেলে এবং নিহত আসলাম একই এলাকার মৃত আজম হোসেনের ছেলে। তাঁরা কুষ্টিয়া সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ও আপন মামাতো-ফুপাতো ভাই। আহত রাসেলও একই এলাকার মজিদ সরদারের ছেলে। আজ রোববার বেলা ১টার দিকে আসলামের পারিবারিক কবরস্থানে তাঁদের মরদেহ পাশাপাশি দাফন করা হয়েছে।
তাঁদের মৃত্যুতে এলাকায় গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শেষবারের মত এক নজর দেখতে ভিড় করছেন উৎসুক জনতা।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল শনিবার রাত ৮টার দিকে খোকসা বাজার থেকে দুই মোটরসাইকেলে এক সঙ্গে শোমসপুরের দিকে যাচ্ছিল। আর শোমসপুর থেকে ছেড়ে আসা নসিমন গাড়িটি যাচ্ছিল খোকসার বাজারের দিকে। পথে কাদিরপুর খাদিজাতুল কোবরা মহিলা মাদ্রাসার সামনে দুটি মোটরসাইকেলের নসিমন গাড়িটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে মোটরসাইকেলের চালক মো. সাব্বির হোসেন ও মোহাম্মদ রাসেল আহমেদ এবং আরেক আরোহী মোহাম্মদ আসলাম হোসেন গুরুতর আহত হন।
পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে খোকসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ নিয়ে যান। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাঁদের কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ৯টার দিকে মো. সাব্বির হোসেন (২১) মারা যান। এরপর মারা যান আরোহী মোহাম্মদ আসলাম হোসেন। এ ছাড়া এই দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত রাসেল হোসেনকে গতকাল রাতেই ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে। তাঁর অবস্থাও আশঙ্কাজনক। ঘটনার পর থেকেই পলাতক রয়েছেন অজ্ঞাতনামা নসিমন গাড়ির চালক।
এ নিয়ে খোকসা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সৈয়দ আশিকুর রহমান বলেন, ‘মোটরসাইকেল ও নসিমন গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় আহত দুজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে। চিকিৎসাধীন রয়েছেন আরও একজন। চালক পলাতক থাকলেও নসিমনটি জব্দ করা হয়েছে। কোনো অভিযোগ না থাকায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’