ভগিরাম মালী। মহান মুক্তিযুদ্ধে ছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগী। যুদ্ধের সময় ভারতের হরিনা ট্রেনিং সেন্টার হাসপাতালে যোগদান করেন। সেখানে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের আনা-নেওয়ার দায়িত্ব ছিল তাঁর। আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সুস্থ করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করতেন তিনি।
স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাননি এই ভগিরাম। রাস্তায় ভিক্ষা করে কাটছে তাঁর জীবন। স্বাধীনতাযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গণি ওসমানী কর্তৃক স্বীকৃত স্বাধীনতাসংগ্রামের সনদপত্র নিয়ে স্বীকৃতির জন্য ঘুরছেন পথে পথে।
জানা যায়, মহান মুক্তিযুদ্ধে খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় ছিল ১ নম্বর সেক্টরের অধীনে। সাময়িকভাবে পাকিস্তানি হানাদারদের কাছে রামগড় পতনের পর সেক্টর-১-এর হেডকোয়ার্টার পুনঃস্থাপন করা হয় ভারতের ত্রিপুরার সাবরুম মহকুমার হরিনায়। ১ নম্বর সেক্টরের তৎকালীন ক্যাপ্টেন রফিকের অধীনে ভারতের (দক্ষিণ ত্রিপুরা) হরিনায় স্থাপিত হরিনা ট্রেনিং সেন্টার হাসপাতালে যোগদান করেন ভগিরাম। তাঁর সঙ্গে আরও যোগদান করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. কৃষ্ণ কুমার সরকার, আবুল হাশেম, অধিক চন্দ্র দে, নুর আলমসহ অনেকে। হাসপাতালে আহত যোদ্ধাদের দেখভাল করতেন তিনি। তাঁদের সেবা থেকে শুরু করে মালির কাজ ও ঘরের যাবতীয় কাজকর্ম করতেন তিনি। রামগড় দিয়ে ভারতের আগরতলায় নিয়ে যাওয়া আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য তিনি সহযোগিতা করতেন।
সরেজমিনে জানা যায়, মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ সব সুযোগসুবিধা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন এই পঙ্গু বীর মুক্তিযোদ্ধা। পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তাঁর পরিবারের সদস্যসংখ্যা ৪ জন। ১৩ বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় পায়ে আঘাত পান তিনি। চিকিৎসার অভাবে পঙ্গু হয়ে জীবন যাপন করছেন। জাতির ক্রান্তিলগ্নের এই লড়াকু সৈনিক জীবিকা নির্বাহে ভিক্ষাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। রামগড় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড কাউন্সিলের মাধ্যমে জাতীয় দিবসগুলোতে সামান্য সম্মাননা পেলেও বছরের বাকি সময় উপজেলার বাজারের দোকান, বাসস্টেশন ও মানুষের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করে পরিবার চালান।
সাবেক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মফিজুর রহমান বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ভগীরাম মালি মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগী ছিলেন। আহত যোদ্ধাদের সেবা করতেন তিনি। একজন পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি না পেয়ে ভিক্ষা করছে; এটা আমাদের জন্য কষ্টদায়ক। তাঁর স্বীকৃতির জন্য একাধিকবার আবেদন করেও সাড়া পাওয়া যায়নি। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তিনি তাঁর ত্যাগের স্বীকৃতি পাওয়ার দাবিদার।’