ঝিনাইদহ ২৫ শয্যাবিশিষ্ট সরকারি শিশু হাসপাতালে নবজাতকের জন্ডিস চিকিৎসায় মারাত্মক সংকট তৈরি হয়েছে। হাসপাতালের চারটি ফটোথেরাপি মেশিনের মধ্যে তিনটি গত এক বছর অচল। ফলে সেগুলোর স্থান হয়েছে স্টোর রুমে। মাত্র একটি মেশিনের সাহায্যে হাসপাতালটিতে কোনো রকমে নবজাতকের সেবা দেওয়া হচ্ছে। ফলে বিনা মূল্যের এই সেবা পেতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে চিকিৎসা নিতে আসা হতদরিদ্র পরিবারের লোকজনকে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিনই কোনো না কোনো রোগীকে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে মেশিন-সংকটের কারণে। অনেকে বাধ্য হয়ে বেসরকারি হাসপাতালে থেরাপি নিচ্ছে। তবে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন হতদরিদ্র মানুষ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলা শহরের বাস টার্মিনাল এলাকায় ২০০৫ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকারের আমলে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় হাসপাতালটির। এক বছর পর নির্মাণকাজ শেষ হয়। দীর্ঘদিন পড়ে থাকার পর ২০২০ সালে করোনার সময় চালু হয় হাসপাতালটি। এরপর সরকারি বরাদ্দের দুটি এবং অনুদানের দুটিসহ মোট চারটি ফটোথেরাপি মেশিনে চলছিল নবজাতকদের জন্ডিসের চিকিৎসা। প্রতিদিন চারটি, কখনো একটি মেশিনে দুটি করে শিশু রেখেও সেবা দেওয়া হতো। কিন্তু বিদ্যুৎ বিভ্রাটে এক বছর আগে তিনটি মেশিন নষ্ট হয়ে যায়। দীর্ঘদিন চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হলেও নেওয়া হয়নি সেগুলো মেরামতের উদ্যোগ।
সরেজমিনে দেখা যায়, নষ্ট মেশিনগুলো হাসপাতালের দুটি স্টোর রুমে ফেলে রাখা হয়েছে। সেগুলো এখন একেবারেই মেরামতের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
কম ওজন নিয়ে ভর্তি এক শিশুর অভিভাবক অর্থি আহমেদ বলেন, হাসপাতালে মাত্র একটি ফটোথেরাপি মেশিনের কারণে অনেক নবজাতক সেবাবঞ্চিত হচ্ছে।
হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ সহকারী অধ্যাপক ডা. আলী হাসান ফরিদ জামিল বলেন, ‘৮০-৯০ ভাগ নবজাতকের জন্ডিসের শঙ্কা থাকে। মাত্রা বেশি হলে ফটোথেরাপি দিতে হয়। সঠিক চিকিৎসা না পেলে মস্তিষ্ক দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, প্রতিবন্ধী হওয়ার শঙ্কা থাকে। কিন্তু তিনটি মেশিন নষ্ট থাকায় কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে পারছি না। প্রতিদিন চার-পাঁচজনকে ফেরত দিতে হচ্ছে।’
জেলার সিভিল সার্জন ডা. মো. কামরুজ্জামান জানান, বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমারে আগুনের কারণে মেশিনগুলো নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। শিশুদের নিরবচ্ছিন্ন সেবা দিতে নতুন মেশিনের ব্যবস্থা করতে জোরালো চেষ্টা চলছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে জানানো হয়েছে।