গাজীপুরের শ্রীপুরে কয়েক ঘণ্টার ভারী বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে কয়েকটি গ্রামের হাজারো বসতবাড়ি। পানিতে তলিয়ে গেছে বিভিন্ন শিল্পকারখানা। ডুবে গেছে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিশাল অংশ। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ঢুকে গেছে পানি। অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও যত্রতত্র খাল ভরাট করার কারণে বন্ধ হয়েছে পানি সঞ্চালন লাইন। যার কারণে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। অসহনীয় ভোগান্তি নিয়ে যাতায়াত করছে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার শ্রমিক-পথচারী।
আজ শনিবার ভোররাত থেকে একাধারে সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত মুষলধারে বৃষ্টি হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, পৌর শহরের ৫ নম্বর ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সীমান্ত লিচুবাগান এলাকার প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল, ইউর ফ্যাশন, পিলোসিট টেক্সটাইলসহ আশপাশের বসতবাড়ি, দোকানপাটে পানি ঢুকে গেছে। তেলিহাটি ইউনিয়নের মুলাইদ গ্রামের রঙিলা বাজার এলাকার কয়েক হাজার বসতবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি উঠেছে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেও। রঙিলা বাজার এলাকার ক্যাপ্টেন সিএনজি তলিয়ে গেছে। মুলাইদ গ্রামের প্যারাডাইস স্পিনিং, পিনসিল লিমিটেড পানিতে তলিয়ে গেছে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের এক কিলোমিটার সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে করে খাওয়ার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে বিভিন্ন পরিবহন।
লিচুবাগান এলাকার বাসিন্দা খোরশেদ আলম বলেন, ‘আমাদের এলাকায় বেশির ভাগ শিল্পকারখানা পানির নিচে। পাকা সড়কে হাঁটুপানি। ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে শিল্পকারখানার শ্রমিকসহ পথচারীরা। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান তলিয়ে গেছে। জলাবদ্ধতার মূল কারণ হলো এখানে একটি পাইপ কালভার্ট আছে। সেটির মুখ বন্ধ করে দিয়েছেন প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল ও ইউর ফ্যাশন কারখানার মালিকেরা। যার কারণে আজ শত শত বসতবাড়ি পানিবন্দী।’
মুলাইদ গ্রামের বাসিন্দা শাহজাহান মিয়া বলেন, ভোররাত থেকে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে বসতবাড়িতে হাঁটুপানি। বাসায় থাকা শিশু-বৃদ্ধরা ঘরবন্দী। রান্নাঘরে পানি প্রবেশ করার কারণে রান্নাবান্না বন্ধ। কালভার্টের মুখ বন্ধ হওয়ার কারণে পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
মুলাইদ গ্রামের বাসিন্দা সংরক্ষিত ইউপি সদস্য হাজেরা খাতুন বলেন, মুলাইদ গ্রামের হাজার হাজার বসতবাড়ি পানিবন্দী হয়েছে। প্রায় সব বাড়িতে হাঁটুপানি। একটি বাড়িতেও রান্নাবান্নার সুযোগ নেই। খুবই ভোগান্তি। পানি নিষ্কাশনের সমস্ত রাস্তা বন্ধ। আশপাশের সমস্ত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান তলিয়ে গেছে।
মাওনা চৌরাস্তা এলাকার ব্যবসায়ী ফয়সাল আহমেদ বলেন, বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যায় উপজেলার প্রাণকেন্দ্র মাওনা চৌরাস্তা। হাজার হাজার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করে। মহাসড়কে হাঁটুপানি থাকে। ময়লা-বর্জ্য পানি মিলে একাকার হয়। সেগুলো মাড়িয়ে চলাচল করতে হয় হাজার হাজার মানুষকে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সজীব আহমেদ বলেন, কয়েক ঘণ্টার ভারী বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে শত শত বসতবাড়ি। কয়েকটি স্থানে পানি সঞ্চালন লাইনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। আগামীকাল রোববার এক্সকাভেটরের মাধ্যমে পানি নিষ্কাশনে বাধা হয়েছে—এমন স্থানগুলো খুলে দেওয়া হবে।