হোম > সারা দেশ > গাজীপুর

খিরু-লবলঙ্গ শুধু নামেই নদ

রাতুল মণ্ডল, শ্রীপুর (গাজীপুর)  

দূষণে কালো কুচকুচে খিরু নদের পানি। ছবি: আজকের পত্রিকা

গাজীপুরের শ্রীপুরের বুক চিরে বয়ে গেছে স্বল্প দৈর্ঘ্যের কয়েকটি নদ-নদী। একসময় সেগুলো ব্যবসা-বাণিজ্য ও কৃষি উৎপাদনে সহায়ক ভূমিকা রাখত; বর্তমানে দখল আর দূষণে শুধু নামেমাত্র। বর্ষাকালে পানি থাকলেও বছরের বেশির ভাগ সময় থাকে যৎসামান্য পানি। দূষণে পানি কুচকুচে কালো হয়েছে। স্থানীয়দের ভাষ্য, বহু বছর ধরে দেখা মেলে না স্বচ্ছ জলের। ক্ষতিকর কেমিক্যালযুক্ত পানি কৃষিকাজে ব্যবহারও করা যাচ্ছে না। নদ-নদীতে এখন মাছ তো দূরের কথা, কোনো জলজ প্রাণীও বেঁচে নেই।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার বুক চিরে বয়ে যাওয়া শীতলক্ষ্যা, সুতিয়া, খিরু, মাটিকাটা, লবলঙ্গ ও পারুলী—এই ছয় নদ-নদীর মধ্যে চারটি ব্যাপকভাবে দখল আর দূষণের কবলে। সবচেয়ে বেশি দখল-দূষণের শিকার লবলঙ্গ। এরপরই দূষণের শিকার খিরু, মাটিকাটা ও সুতিয়া। উপজেলার গাজীপুর মাওনা ও পৌরসভার বেশ কিছু অংশ নিয়ে বয়ে গেছে লবলঙ্গ। দখল-দূষণের ফলে নদী থেকে খাল এবং বর্তমানে খাল থেকে নালায় পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের থাবায় এটি নামমাত্র নদ। এতে একসময় বড় বড় জাহাজ চলাচল করত; এখন নৌকাও চলাচল করে না। বিভিন্ন কারখানার কেমিক্যালযুক্ত পানি সরাসরি নদীতে পড়ে এটি মারাত্মক দূষণের শিকার হয়েছে।

উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে খিরু নদ। একসময় এটি ছিল বাণিজ্যের এক অপার সম্ভাবনার মাধ্যম। এখন দখল-দূষণের শিকার। বর্ষাকালে মাসখানেক নৌকা চলাচল করে। পার্শ্ববর্তী ভালুকা উপজেলার বেশ কয়েকটি কারখানা কেমিক্যালযুক্ত পানি সরাসরি খিরুতে পড়ায় মারাত্মক দূষণের শিকার হয়েছে খিরু। এখন মাছ তো দূরের কথা, কোনো জলজ প্রাণী বেঁচে নেই।

নদীপারের লোকজন জানান, দূষণের শিকার নদীর পানির দুর্গন্ধ ছড়িয়ে যায় কয়েক কিলোমিটার। নদীর পানি কৃষিজমিতে সেচ দেওয়া যায় না। এই পানি কৃষিজমিতে দিলে ফসল নষ্ট হয়। গবাদিপশু গোসল করালে চর্মরোগ দেখা দেয়। গরু-মহিষের শরীরে ফোসকা পড়ে।

কাওরাইদ ইউনিয়নের হয়দেবপুর গলদাপাড়া, ধামলই, সোনাব, লাকচতল, ভিটিপাড়া বরকুল গ্রামের বুক চিরে বয়ে গেছে মাটিকাটা নদী। খিরুর দূষিত পানি এসে মারাত্মক দূষণে পড়েছে মাটিকাটা। এর ফলে কৃষি উৎপাদনে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া সোনাব, কাওরাইদ, বেইলদিয়া, বাপ্তা, নান্দিয়া সাঙ্গুন গ্রামের বুক চিরে বয়ে গেছে সুতিয়া নদী। ভালুকা উপজেলা কারখানার দূষিত কেমিক্যালযুক্ত পানি সুতিয়া নদীতে পড়ে এটি দূষণের শেষ প্রান্তে। একইভাবে রাজাবাড়ি প্রহলাদপুর ইউনিয়নের বুক চিরে বয়ে যাওয়া পারুলী নদী দূষণের শিকার হয়েছে শিল্পকারখানার দূষিত কেমিক্যালযুক্ত পানিতে। শীতলক্ষ্যাও দূষণে ধুঁকছে।

লবলঙ্গপারের বাসিন্দা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘লবলঙ্গ তো এখন গল্প। এখন তো নালা হয়ে গেছে। বাপ-দাদারা বলতেন, লবলঙ্গে জাহাজ চলাচল করত। আমরা তো এখন নৌকা চলতেও দেখি না। এর পানি যেন বিষের নহর। কালো কুচকুচে।’

নদী পরিব্রাজক দল শ্রীপুর শাখার সভাপতি সাঈদ চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের দাবি, নদীগুলো দূষণমুক্ত করা হোক। আমরা চাই, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সর্বোচ্চ হস্তক্ষেপে যেন নদীগুলো আবার স্বচ্ছ জলের নদীতে পরিণত হয়।’

শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সজীব আহমেদ বলেন, নদ-নদীগুলোর দূষণ রোধে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কিছুদিন আগে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সচিব দূষণের শিকার লবলঙ্গ পরিদর্শন করে সব ধরনের পদক্ষেপ দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন।

গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আরেফিন বাদল বলেন, ‘শ্রীপুরের চারটি নদ-নদী মারাত্মক দূষণের শিকার; যা মনুষ্যসৃষ্ট। এটি প্রাকৃতিক দূষণ নয়। পরিবেশ উপদেষ্টার নির্দেশনায় এরই মধ্যে লবলঙ্গ দূষণ রোধে কয়েকটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে লবলঙ্গের পানি পরীক্ষা করা হচ্ছে। পাশাপাশি যেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান দূষণের সঙ্গে জড়িত, সেসব কারখানার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। আশা করি, শিগগির নদ-নদীগুলো দূষণের হাত থেকে রক্ষা পাবে।’

গাজীপুরে স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যা: কুড়িগ্রাম থেকে অভিযুক্ত স্বামী গ্রেপ্তার

স্ত্রীকে হত্যার পর শ্বশুরকে ফোন, ‘এসে মেয়ের লাশ নিয়ে যান’

গাজীপুরে ট্রেনে কাটা পড়ে নানি-নাতনিসহ নিহত ৩

শ্রীপুরে ইটভাটায় ডেকে নিয়ে জাসাস নেতাকে হত্যার ঘটনায় মামলা, গ্রেপ্তার ১

‎টঙ্গীতে যৌথ বাহিনীর অভিযানে জুলাই যোদ্ধা তাহরিমা গ্রেপ্তার

টঙ্গীতে পোশাক কারখানার অর্ধশতাধিক নারী শ্রমিক অসুস্থ

শ্রীপুরে আগুনে পুড়ল ১০টি বসতঘর, সর্বস্ব হারালেন ভাড়াটিয়ারা

গাজীপুরকে সমন্বিত ও পরিবেশবান্ধব মেগা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় আনা হবে: স্থানীয় সরকার সচিব

রিমান্ডে নেওয়ার সময় কাশিমপুর কারাগারে আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যু

গাজীপুরে কার্টন কারখানায় আগুন, নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ৭ ইউনিট