গাজীপুরের শ্রীপুরে বেতন-বোনাসের দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন একটি কারখানার কয়েকশত শ্রমিক। এ সময় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের দুপাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার জৈনা বাজার এলাকার গুলশান স্পিনিং মিলের শ্রমিকেরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।
পুলিশ শ্রমিকদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টাকালে পুলিশ ও শ্রমিকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। এ সময় পুলিশের লাঠিপেটায় বেশ কয়েকজন শ্রমিক আহত হয়েছেন। শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কয়েকটি সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এতে দেড়ঘন্টা ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে।
কারখানার শ্রমিক মিনহাজ উদ্দিন বলেন, ‘সরকার নতুন বেতন অবকাঠামো ঘোষণা করলেও আমাদের বেতন বৃদ্ধি করছে না। সামান্য বেতনের চাকরিতে আমাদের সংসার চালাতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। সন্তানদের পড়াশোনার খরচ চালানো যাচ্ছে না। আমরা আমাদের ন্যায্য দাবি আদায় করতে গিয়ে পুলিশের লাঠিপেটা খেতে হয়েছে। পুলিশ সমানে লাঠিপেটা করছে। কই আমরা তো কোনো গাড়িঘোড়া ভাঙচুর করিনি। তাহলে কেন তারা আমাদের ওপর লাঠিপেটা করবে?’
রোকেয়া আক্তার নামের এক শ্রমিক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গার্মেন্টসে বেতন বৃদ্ধি হলেও আমাদের বেতন বৃদ্ধি হয়নি। শুধু আশ্বাসের ওপর চলছি গত কয়েকমাস। আমরা আশ্বাস চাই না। আমরা আমাদের নতুন বেতন অবকাঠামো ঘোষণা বাস্তবায় চাই। কারখানা কর্তৃপক্ষ আজ জানিয়েছে তারা ঈদ বোনাস দিবে না। সামান্য বেতনের টাকায় বাসাভাড়া আর দোকান বাকি পরিশোধ করেই শেষ। ঈদে ছেলেমেয়েদের জন্য একটা নতুন জামাকাপড় কিনবো তারও উপায় নেই। তাই বাধ্য হয়ে রাস্তায় এসেছি।’
স্থানীয় ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন বলেন, দুপুর দেড়টার দিকে গুলশান স্পিনিং মিলসের শ্রমিকেরা ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কে এসে অবস্থান নেয়। এরপর কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলে। হঠাৎ করে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে শ্রমিকদের লাঠিপেটা করে। শ্রমিকেরা ছত্রভঙ্গ হয়ে এদিক-সেদিক চলে যায়।
এর কিছুক্ষণ পর শ্রমিকেরা এসে তরি রেস্টুরেন্টের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশ সদস্যদের লক্ষ করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। তাতে করে তরী রেস্টুরেন্টের সমস্ত কাচের দরজা জানালা ভেঙে যায়।
তরী রেস্টুরেন্টের মালিক সাদ্দাম হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শ্রমিক পুলিশ ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনার একপর্যায়ে পুলিশ এসে তরী রেস্টুরেন্টের পাশে অবস্থান নেয়। এ সময় উত্তেজিত শ্রমিকেরা রেস্টুরেন্ট ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। তাতে রেস্টুরেন্টের দরজা জানালা ভেঙে যায়। রেস্টুরেন্টের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।’
কারখানার মানবসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা শাহ্ মোহাম্মদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের মালিকের সিদ্ধান্ত আমরা শ্রমিকদের জানিয়েছি। দেশের সকল কারখানা বেতন বৃদ্ধি করলে আমাদের কারখানাও করবে। এরপরই শ্রমিকেরা রাস্তায় চলে যায়। বোনাসের বিষয়ে তবুও আলোচনা চলছে। কিন্তু শ্রমিকেরা আমাদের কথা না মেনে আন্দোলন করছে।’