‘দুই দিন সাপ্তাহিক ছুটির পরে আজ সকালে অফিসে গেছে। এর কিছুক্ষণ পর আমার মাকে অফিসের একজন কল দিয়ে পপুলার হাসপাতালে আসতে বলেন। পরে আমরা এসে দেখি আমার বাবা আর বেঁচে নেই। দুই মাস হয়নি আদরের বোনটাকে হারালাম। আজ বাবাও চলে গেল। আমি এখন মাকে কী বলে সান্ত্বনা দেব!’
কথাগুলো বলছিলেন রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব এলাকায় ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত আব্দুল মান্নানের ছেলে মো. আশিক। সায়েন্স ল্যাবের পপুলার হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গিয়ে দেখা যায় আহত ও নিহতদের স্বজনদের আহাজারি। নিহত আব্দুল মান্নানের বড় ছেলে মো. আশিক বাবাকে হারিয়ে শোকস্তব্ধ।
আজ রোববার রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবে প্রিয়াঙ্গণ শপিং সেন্টারের পাশের একটি ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন। নিহত তিনজনের একজন আব্দুল মান্নান। ৪৫ বছর ধরে লায়রা প্রোডাক্ট (নিউ জেনারেশন) নামের ওই প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিং ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতেন। দুই মাস আগে হারিয়েছেন ছোট মেয়েকে আর আজ চলে গেলেন নিজেই।
আজকের পত্রিকাকে আশিক বলেন, ‘বাবা লায়রা প্রোডাক্ট নামের প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করতেন। সর্বশেষ মার্কেটিং ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতেন। আমরা দুই ভাই ও এক বোন ছিলাম। ছোট বোনটি টিবি রোগে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিল। গত ৪ জানুয়ারি বাসায় অসুস্থ হয়ে পড়লে মিটফোর্ড হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যায়। বোনকে হারানোর পরে বাবা-মা খুবই কান্নাকাটি করত। আজকে বাবাও চলে গেল।’
এদিকে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও প্রিয়াঙ্কা ভবনের ব্যবসায়ী মো. মাহবুব আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বেলা ১১টার কিছু আগে আমরা দোকান খুলে মাত্র বসেছি। এ সময় বিকট শব্দে দোকানের বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে যায়। পরে আমরা বের হয়ে দেখি পাশের ফিনিক্স ইনস্যুরেন্স কোম্পানি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ভবনে বিস্ফোরণ ঘটেছে। ভবনের সামনে কয়েক জনকে আহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেছি। দুজনকে মৃত অবস্থায় পেয়েছি। তাঁদের সবাইকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে।’
মাহবুব আরও বলেন, ‘বিস্ফোরণের পরে ভবনে থাকা অনেকে লাফ দিতে যাচ্ছিলেন। আমরা তাঁদের নিষেধ করেছি। পরে ফায়ার সার্ভিস এসে তাঁদের উদ্ধার করেছে।’
অপর এক ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিস্ফোরণের সময় ভবনের নিচতলার একটি হোটেলে বসে সকালের নাশতা খাচ্ছিলাম। হঠাৎ বিস্ফোরণের শব্দে আমরা বের হয়ে দেখি বিস্ফোরণ ঘটেছে। কয়েকজন আহত হয়ে পড়ে আছে। এরপর আমি দ্রুত দৌড়ে চলে আসি।’