গাজীপুরের বাসন থানা এলাকায় বেতন ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে বিক্ষোভ করে পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা সড়ক অবরোধ করতে চাইলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় গুলিবিদ্ধ একজন শ্রমিক নিহত হন।
আজ সোমবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
শ্রমিকদের দাবি, পুলিশের ছোড়া গুলিতে নিহত হয়েছেন ওই তিনি।
নিহত শ্রমিকের নাম—রাসেল হাওলাদার (২৬)। তিনি মৃত রাসেল ঝালকাঠির সদর উপজেলার খাগুটিয়া গ্রামের আব্দুল হান্নান হাওলাদারের ছেলে। বর্তমানে গাজীপুরে বাসন থানার আওতাধীন মালেকের বাড়ি এলাকায় একটি মেসে থাকতেন।
এরপর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কারখানা থেকে বের হয়ে তাঁরা পায়ে হেঁটে বাসার দিকে রওনা হন। তখন কারখানার সামনে পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এতে রাসেল বুকের ডান পাশে এবং ডান হাতে গুলিবিদ্ধ হন। তাৎক্ষণিক তাঁকে উদ্ধার করে শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেলে নেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসলে চিকিৎসক রাসেলকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. বাচ্চু মিয়া মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মৃতদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রাখা হয়েছে।
ন্যূনতম বেতন ২৩ হাজার টাকা নির্ধারণের দাবিতে সপ্তম দিনের মতো আজ সোমবার সকাল থেকে গাজীপুরে শ্রমিক বিক্ষোভ শুরু হয়। কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক ও তেলিচালা এলাকার লেগোস অ্যাপারেলস, এটিএস, বে-ফুটওয়্যারসহ বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকেরা বেশ কিছু যানবাহন ভাঙচুর করে এবং একটি পিকআপ আগুনে পুড়িয়ে দেয়।
এতে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশ টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করলে শ্রমিকেরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
সকাল ৯টা থেকে গাজীপুর মহানগরীর ভোগরা বাইপাসের আশপাশের এলাকার বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকেরা আন্দোলনে নামে। এ সময় কয়েকটি কারখানায় ভাঙচুর চালিয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মিছিল বের করলে পুলিশ লাঠিপেটা ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। তাতে শ্রমিকেরা ছত্রভঙ্গ হয়ে মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে।
আন্দোলনকারী শ্রমিকদের একটি অংশ গাজীপুর মহানগরীর ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভোগরা এলাকায় অবস্থান নিয়ে যানবাহন ভাঙচুর করতে গেলে শিল্প পুলিশ ও বাসন থানা-পুলিশ টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। তাতে শ্রমিকেরা প্রথমে ছত্রভঙ্গ হলেও পরে আবার সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে বিক্ষোভ করে ও কারখানায় ঢিল ছোড়ে। এ সময় উত্তেজিত শ্রমিকেরা মহাসড়কের কলম্বিয়া এলাকায় একটি পিকআপে আগুন ধরিয়ে দেয়।
এদিকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ রোডে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। হরতালের পরদিন মানুষ তাদের কর্মস্থলে রওনা হলেও সড়ক অবরোধের কারণে তারা যেতে পারছে না। পড়েছে চরম ভোগান্তিতে। অনেকেই হেঁটে রওনা হয়ে পথে আটকা পড়েছে।
কারখানা শ্রমিকেরা বলেন, বাজারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেলেও তাঁদের কাজের দাম বাড়েনি। তাঁদের দাবি, ন্যূনতম বেতন ২৩ হাজার টাকা নির্ধারণ করতে হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের আন্দোলন চলবে।