হোম > সারা দেশ > গাজীপুর

ইজতেমা ময়দানে ৩ জন নিহতের ঘটনায় পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন

গাজীপুর প্রতিনিধি

গাজীপুরের টঙ্গীতে তাবলিগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের দখলকে কেন্দ্র করে বিবদমান দুটি গ্রুপের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ। এ ঘটনার সার্বিক বিষয়ে নিজ নিজ অবস্থান পরিষ্কার করতে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেছে উভয়পক্ষ।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর পৃথক স্থানে জুবায়েরপন্থী বা শুরায়ে নেজামের অংশ এবং ভারতের মাওলানা সাদ কান্ধলভির অনুসারী অংশ সংবাদ সম্মেলন করে।

রাজধানীর গুলশানের লেকভিউতে জেস্টি কিচেনে সংবাদ সম্মেলন করে শুরায়ে নেজাম। তাঁরা ইজতেমা ময়দানে নির্ধারিত সময়েই বিশ্ব ইজতেমা পালন করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন। একই সঙ্গে সাদপন্থীরা ইজতেমা করতে চাইলে কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছে। তাঁরা সাদপন্থীদের বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষণারও দাবি জানিয়েছেন।

এ সময় হাবিবুল্লাহ রায়হান বলেন, সাদপন্থীদের হামলায় তিনজন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন। এই হত্যা ও হত্যাচেষ্টার ঘটনায় মামলা করা হবে। মাওলানা সাদের অনুসারীদের ইজতেমা করার অনুমতি না থাকলেও তাঁরা জোর করে ঢুকে প্রশাসনের আদেশ অমান্য করেছেন। সাদপন্থীরা যদি ইজতেমা মাঠ দখলের চেষ্টা করেন, তাহলে সাধারণ মুসল্লিরা তাঁদের প্রতিহত করবেন। নির্ধারিত সময়েই বিশ্ব ইজতেমা পালন করা হবে। সাদপন্থীরা ইজতেমা করতে চাইলে কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে ঘোষণা করেন তিনি। তিনি সাদ অনুসারীদের সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে বাংলাদেশে তাঁদের নিষিদ্ধ ঘোষণারও দাবি জানান।

অপর দিকে বেলা আড়াইটায় ঢাকার মিরপুর-১–এর কিয়াংশি চায়নিজ রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলন করে মাওলানা সাদ কান্ধলভির অনুসারীরা। তাঁরা ইজতেমা ময়দানের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের জন্য শুরায়ে নেজামের অনুসারীদের দায়ী করে বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও বিচার দাবি করেছেন।

সম্মেলনে বক্তারা তাবলিগে সৃষ্ট বিভক্তি, মামুনুল হক ও জুবায়েরপন্থীদের নৃশংস হামলা এবং তাবলিগ নিয়ন্ত্রণের ষড়যন্ত্রের বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি করেছেন।

তাঁরা আরও বলেন, ১৭ ডিসেম্বর জুবায়েরপন্থীদের পরিকল্পিত হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে সাদপন্থী তাবলিগ জামাতের মুরব্বিরা শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানান। তাঁরা বলেন, তাবলিগে মামুনুল হক এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পক্ষগুলোর হস্তক্ষেপ ও বিভক্তি সৃষ্টির অপচেষ্টায় দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ভয়াবহ সংকটের মুখে পড়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটায় ঢাকার মিরপুর-১ এর কিয়াংশি চাইনিজ রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলন করে মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

তাঁরা অভিযোগ করেন, ১৪ ডিসেম্বর বিশ্ব ইজতেমার ময়দানে মামুনুল হক ‘তুরাগ নদ রক্তে লাল’ করার ঘোষণা দেন। এ ধরনের বক্তব্য দেশের ধর্মীয় পরিবেশ উত্তপ্ত করে তুলছে। তা ছাড়া, জুবায়েরপন্থীদের সহিংস কর্মকাণ্ড এবং উসকানিমূলক বক্তব্যের পর থেকে সারা দেশে সাদপন্থীদের ওপর নির্যাতন বাড়ছে। আমরা তাবলিগে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং মাদ্রাসারছাত্রদের ব্যবহারের মাধ্যমে সংঘাত সৃষ্টির চক্রান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানাই। মামুনুল হক ও তাঁর অনুসারীরা রাজনৈতিক নেতাদের প্রভাব কাজে লাগিয়ে তাবলিগ জামাতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছেন। এর ফলে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের প্রচেষ্টা বারবার ব্যর্থ হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা ৬ দফা দাবি তুলে ধরেন। এগুলো হলো—আগামী বিশ্ব ইজতেমায় মাওলানা সাদ কান্ধলভির অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, কাকরাইল মসজিদে সাদপন্থীদের স্বাভাবিক কার্যক্রম নির্বিঘ্নে পরিচালনা করতে দেওয়া, ইজতেমা ময়দান সরকারের নিয়ন্ত্রণে রেখে সাদপন্থীদের ইজতেমার আগে ময়দান বুঝিয়ে দেওয়া, আগামী বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনের জন্য সরকার এবং সংশ্লিষ্টদের সহায়তা নিশ্চিত করা, সারা দেশে সাদপন্থীদের ওপর আক্রমণ ও নির্যাতন বন্ধ করাসহ মসজিদে-মসজিদে বাধা সৃষ্টি রোধে কার্যকর নেওয়া এবং তাবলিগের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে রাজনৈতিক নেতাদের হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে।

এতে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা জিয়া বিন কাসেম, মুফতি মুআজ বিন নূর, মুফতি শফিউল্লাহ, মুফতি আজিমুদ্দীন, মাওলানা আনাস প্রমুখ।

ময়দান ও আশপাশের এলাকায় জনসাধারণের প্রবেশ ও সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণার পর ময়দান ছেড়ে গেছে উভয়পক্ষ। ময়দানে যাতে কেউ প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য সেনাসদস্য, র‍্যাব, বিজিবি ও পুলিশ সদস্য সমন্বয়ে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

এদিকে, বিশ্ব ইজতেমার মাঠ দখলকে কেন্দ্র করে বিবদমান দুটি গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা চারজন জানালেও প্রকৃতপক্ষে সেখানে মারা গেছেন তিনজন। বিষয়টি গাজীপুর মহানগর পুলিশ ও ইজতেমার শুরায়ে নেজামের দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছেন।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান বলেছেন, ‘ইজতেমা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এখন পর্যন্ত আমরা তিনজনের মরদেহ পেয়েছি। তাদের আমরা ময়নাতদন্ত করেছি। এর মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে দুজনের এবং গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজনে মরদেহ ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু আমি তিনজনের মরদেহ ময়নাতদন্ত করেছি, তাই মৃতের সংখ্যা আমার হিসাবে তিনজন।’

অপর দিকে, শুরায়ি নেজামের (জুবায়েরপন্থী) মিডিয়া সমন্বয়কারী হাবিবুল্লাহ রায়হান বলেন, ‘গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সাংবাদিক সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হামরায় নিহত সাথি ভাই আমিনুল হক ওরফে বাচ্চুর মিয়ার নাম ভুলে আমিনুল ইসলাম ও বাচ্চু মিয়া বলে দুবার উচ্চারণ করায় একজনকে দুজন বলা হয়েছে। আসলে আমিনুল হক ও বাচ্চু মিয়া একই ব্যক্তি, দুই ব্যক্তি নয়। ফলে নিহতের সংখ্যা চার নয় তিন।’

নিহতরা হলেন— কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া থানার এগারোসিন্দু গ্রামের মৃত উসমান মিয়ার ছেলে আমিনুল হক ওরফে বাচ্চু মিয়া (৭০)। ঢাকার দক্ষিণ খানের বেরাইদ এলাকার আব্দুস সামাদের ছেলে বেলাল হোসেন (৬০) এবং অপরজন হলেন বগুড়া জেলার তাজুল ইসলাম (৭০)।

জিএমপি কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান বলেছেন, ‘পরবর্তী সিদ্ধান্ত না আসা অবধি ময়দানে কোনো পক্ষকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। ময়দান প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে আছে, থাকবে। পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ রয়েছে।’

শহীদ জিয়ার কবরের পূর্ব পাশে খোঁড়া হচ্ছে নতুন কবর

খালেদা জিয়ার জানাজা: যেসব পথে নিয়ন্ত্রিত থাকবে যান চলাচল

রাষ্ট্রীয় শোক: ঢাকায় ৩ দিন আতশবাজি, পটকা ফোটানো নিষিদ্ধ

খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নিতে বাড়ানো হলো মেট্রোরেলের ট্রিপ

হাদি হত্যা মামলা: সিবিউন-সঞ্জয়ের তৃতীয় দফায় রিমান্ড, ফয়সাল নামে আরও একজন রিমান্ডে

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে জাবিতে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী ফোরামের কালো ব্যাজ ধারণ

রাজধানীর রামপুরায় অটোরিকশার ধাক্কায় বৃদ্ধের মৃত্যু

গয়েশ্বর চন্দ্রের আসনে বিএনপির বিদ্রোহী তিন বড় নেতাসহ ১৬ প্রার্থী, শক্ত লড়াইয়ের আভাস

খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবর শুনে এভারকেয়ারের সামনে ভিড়, পুলিশের ব্যারিকেড

হারিয়ে যাওয়া কনাই নদ উদ্ধার উদ্‌যাপন