ছোট পর্দার অভিনেত্রী হোমায়রা হিমুর আত্মহত্যার পুরো ঘটনাটিই ঘটেছে এ ঘটনায় গ্রেপ্তার মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন ওরফে রুফি ওরফে উরফি জিয়ার সামনে। তিনি খাটে বসে সেই দৃশ্য দেখেছেন। হিমু গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলে যাওয়ার পর পাশের ঘরের মিহিরকে ডেকে এনে দড়ি কেটে তাঁকে নামিয়ে এনে হাসপাতালে নেন। ততক্ষণে হিমু মারা গেছেন।
আজ শুক্রবার র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে জিয়াউদ্দিনকে হাজির করে ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর উত্তরায় নিজ বাসায় অভিনেত্রী হোমায়রা নুসরাত হিমুর আত্মহত্যার খবর পাওয়া যায়। হিমুর খালা বাদী হয়ে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা করেন। এরপর র্যাব রহস্য উদ্ঘাটন ও জড়িত ব্যক্তিদের আটকের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র্যাবের খন্দকার আল মঈন বলেন, ২০১৪ সালে হিমুর খালাতো বোনের সঙ্গে জিয়াউদ্দিনের বিয়ে হয়। কিছুদিনের মধ্যে পারিবারিক সমস্যায় বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। কিন্তু হিমু ও জিয়াউদ্দিনের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল।
জিয়াউদ্দিন আবার বিয়ে করলেও হিমুর সঙ্গে বিভিন্নভাবে নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রাখেন এবং চার মাস আগে তাঁরা ঘনিষ্ঠ হন। একপর্যায়ে জিয়াউদ্দিন বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিয়মিত হিমুর বাসায় যাতায়াত শুরু করেন। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাঁদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া ও বাগ্বিতণ্ডা হতো।
এ ছাড়া দু–তিন বছর ধরে হিমু ভিডিও চ্যাটিং অ্যাপ বিগো লাইভে অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে বিপুল অর্থ অপচয় করেন বলে জানান জিয়াউদ্দিন। এসব বিষয় নিয়েও বিভিন্ন সময় তাঁদের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হতো।
সর্বশেষ ঘটনার বর্ণনায় জিয়াউদ্দিন জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার আনুমানিক বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে জিয়াউদ্দিন হিমুর উত্তরার বাসায় আসেন। অনলাইন জুয়াসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাঁদের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডার একপর্যায়ে হিমু ভাঙচুর করেন। বাগ্বিতণ্ডার একপর্যায়ে ঘরের বাইরে থেকে একটি মই এনে সিলিং ফ্যান লাগানোর লোহার সঙ্গে আগে থেকে বেঁধে রাখা প্লাস্টিকের রশিতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করবেন বলে তাঁকে জানান হিমু।
জিয়াউদ্দিনের ভাষ্য অনুযায়ী, হিমু এর আগে তিন–চার বার আত্মহত্যা করার হুমকি দিয়েছিলেন। এ কারণে এবার আর গুরুত্ব দেননি। কিন্তু হিমু একটু পরই বেঁধে রাখা রশি দিয়ে গলায় ফাঁস দেন। সেটি তিনি ঘরের খাটে বসে দেখেন। এরপর রশিতে ঝুলন্ত হিমুকে নামাতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে পাশের ঘরে হিমুর মেকআপ আর্টিস্ট মিহিরকে ডেকে আনেন। মিহির রান্নাঘর থেকে বটি এনে রশি কেটে হিমুকে নিচে নামান। এরপর জিয়াউদ্দিন, বাসার দারোয়ান এবং মিহির মিলে হিমুকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
র্যাবের তথ্য অনুযায়ী, জিয়াউদ্দিন ‘ও’ লেভেল শেষ করে টেক্সটাইল কেমিক্যালের ব্যবসা করত। হিমুকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করার পর তিনি হিমুর দুটি আইফোন ও গাড়ি নিয়ে দ্রুত হাসপাতাল ত্যাগ করে। পরে গাড়িটি উত্তরার বাসার পার্কিংয়ে রেখে দেন এবং মোবাইল ফোন দুটি বিক্রির উদ্দেশ্যে রাজধানীর বংশাল এলাকায় যান।