মাঘের ঘন কুয়াশায় রুক্ষ মূর্তি ধারণ করেছে সাংস্কৃতিক রাজধানী খ্যাত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। তবে শীতের এই জীর্ণশীর্ণ প্রকৃতিকে উপেক্ষা করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। ক্রমশ হারিয়ে যাওয়া প্রাণের লোকজ সংস্কৃতি নিয়ে পঞ্চমবারের মতো হাজির হয়েছেন তাঁরা। ক্যাম্পাসকে শিল্পের বর্ণিল রঙে রাঙিয়ে তুলতে আয়োজন করেছেন ‘হিম উৎসব’। তিন দিনের এই উৎসব প্রযোজনা করছে ‘পরম্পরায় আমরা’ শীর্ষক ছাত্রদের একটি প্ল্যাটফর্ম।
এবার প্রথম দিনে গতকাল মঙ্গলবারে সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চে কাঙ্গালিনী সুফিয়াকে সম্মাননা প্রদান, নৃত্যানুষ্ঠান নৃত্য-নৈবেদ্য, মুক্তিযোদ্ধা চত্বরে বহুস্বরের ‘গানের আওয়াজ’ সম্পন্ন হয়েছে। দ্বিতীয় দিন আজ বুধবার বিকেলে লাঠিখেলা, সন্ধ্যায় কবি গান ও দিনব্যাপী পারফরম্যান্স আর্টের প্রদর্শনী হয়।
শেষ দিন অর্থাৎ আগামীকাল বৃহস্পতিবার চারুকলা বিভাগে সকালে আর্ট ক্যাম্প দৃশ্যত, ‘তাই জানাই গানে’ (কথা ও গান) পরিবেশনা এবং সন্ধ্যায় ছবি চত্বরে অনুষ্ঠিত হবে ‘কোথায় পাবো তারে’ শীর্ষক ভাব সংগীতের আসর। এ ছাড়াও অনুষ্ঠানের তিন দিন জুড়ে থাকছে জহির রায়হান অডিটোরিয়ামের পাশে চিত্র প্রদর্শনী।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্র আশফার রহমান নবীন বলেন, ‘এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা আমাদের সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান, খেলাধুলা, গানকে শহরের মানুষের সামনে তুলে ধরতে চাই। আমাদের মতো শিক্ষার্থী যারা আমাদের গ্রামীণ, ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি সম্পর্কে সামান্য জ্ঞান রাখে তাদের সামনে আমাদের ঐতিহ্যকে তুলে ধরার চেষ্টা করি। আমরা কোনো করপোরেট হস্তক্ষেপ আশা করি না বলে কোনো স্পনসরশিপ নিই না। সম্পূর্ণ জনগণের টাকায় এই উৎসবের আয়োজন করা হয়।’
কয়েকজন দর্শনার্থী জানান, এমন একটা সময়ে বাস করছি যখন ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে দেশের লোকজ সংস্কৃতি। সংস্কৃতি, ভাষা, নিশ্বাসে এই দেশের মানুষের পরিচয়। শীতের রুক্ষতার ন্যায় এক অদ্ভুত অন্ধকার গ্রাস করে নিচ্ছে সেই সংস্কৃতিকে। তাই শীতের রুক্ষতাকে দূরে সরিয়ে সংস্কৃতির বিকাশ, চর্চা, উপস্থাপন এবং সংরক্ষণের জন্য এ ধরনের উৎসব উদ্দীপনা সৃষ্টি করে বলে জানান তাঁরা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বিগত বছরগুলোতে সারা দেশ থেকে কয়েক হাজার শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন পর্যায়ের দর্শকসহ সংগীত প্রেমীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই উৎসবে অংশগ্রহণ করেছেন।
উৎসবের অন্যতম আয়োজক মৌটুসী রহমান বলেন, ‘হিম উৎসব আমাদের স্থানীয় শিল্প ও সংস্কৃতির ওপর গুরুত্ব দিতে আয়োজন করা হয়। এই উৎসব সাধারণত জনগণের টাকায় আয়োজিত হয়। এবারও কয়েক মাস ব্যাপী বিভিন্ন প্রোগ্রামের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে এই আয়োজন করা হয়েছে।’