অসুস্থ শরীরে কাজ করতে না পারায় দুই বছর আগে এক্সপোর্ট গার্মেন্টসের কাজ থেকে ইস্তফা নেন ৬০ বছর বয়সী জাহের মিয়া। তাই পরিবারের সবার অন্ন জোগাতে তিন মাস আগে তাঁর স্ত্রী ফিরোজা (৪০) কাজ নেন ওই সেজান জুস কারখানায়।
জাহের মিয়া জানান, তাঁরা রূপগঞ্জের সেজান জুস কারখানার পাশের ৫ ক্যানেল এলাকায় থাকেন। ক্লাস এইটে পড়ুয়া মেয়ে সুমাইয়াসহ (১৫) তিন সদস্যের সংসারে ফিরোজা ছিলেন একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। ৩ ঘণ্টার ওভারটাইমসহ প্রতি মাসে ফিরোজা যে ৯ হাজার টাকা পেতেন তা দিয়েই তাঁদের সংসার চলত মোহাম্মদ জাহেরের। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮ থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ডিউটিতে ছিল তাঁর স্ত্রী। সকাল ৮টায় স্বামীর কাছ থেকে কাজে যাচ্ছি বলে বিদায় নিয়ে যান ফিরোজা। ৩ ঘণ্টা ওভারটাইম কাজ করে রাত ৮টায় বাসায় ফেরার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু এখন পর্যন্ত ফিরোজা আর বাসায় ফেরেননি। কারখানায় আগুন লাগার কথা শুনে গতকাল বিকেলে সেখানে যান জাহের। রাত ৭টা পর্যন্ত মোবাইলে রিং গেলেও তা রিসিভ করেননি ফিরোজা। এর কিছুক্ষণ পর থেকেই তাঁর নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।
জাহের মিয়া আরও জানান, ওই কারখানায় বেশির ভাগই শিশু শ্রমিক। প্রতি তলায় ৭০০ থেকে ৮০০ জন শ্রমিক কাজ করতেন।
জাহের ভারাক্রান্ত কণ্ঠে বলেন, আজ শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ৪৯টি লাশ ঢাকা মেডিকেলের মর্গে আনা হয়েছে। প্রায় সবগুলো লাশই ঝলসানো। আমার স্ত্রীর লাশ হয়তো এখানেই আছে। তাই নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা মেডিকেলের মর্গে এসেছি। স্ত্রীর লাশ আদৌ চিনতে পারব কিনা তা জানি না। যদি লাশ পাই তাহলে মেয়ের কাছে কী জবাব দিব?
উল্লেখ্য, এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা ৪২ মিনিটে উপজেলার কর্ণগোপ এলাকায় অবস্থিত ওই ফ্যাক্টরিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।