এক রাতের বৃষ্টিতে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কয়েক হাজার একর আমন ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে শতাধিক মাছের খামার। নষ্ট হয়েছে শীতকালীন বিভিন্ন শাকসবজি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার রাতের টানা বৃষ্টিতে উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের নয়াপাড়, ধামলই, গলদাপাড়া, নান্দিয়া সাঙ্গুন গ্রামের শত শত একর জমির আমন ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। ধানখেতে থইথই পানি। মাছ শিকারিরা বিভিন্ন ধরনের জাল দিয়ে মাছ শিকার করছেন।
উপজেলার ধামলই গ্রামের বেশ কয়েকটি মাছের খামারের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। উপজেলার নান্দিয়া সাঙ্গুন গ্রামের নদীঘেঁষা ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। উপজেলার কাওরাইদ-বরমী সড়কের কালীনারায়ণ উচ্চবিদ্যালয় এলাকায় সড়কের নিচের মাটি সরে গিয়ে বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়ক ও কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পৌর শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বাসাবাড়ি, দোকানপাট সিএনজি স্টেশনে পানি জমে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে মাটির ঘর ধসে গিয়ে কয়েকজন আহত হয়েছে।
উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের আবদার গ্রামের কৃষক আব্দুল লতিফ বলেন, ‘আমার তিন বিঘা আমনখেতে গলা সমান পানি। মানুষ মাছ শিকার করছে আনন্দে। আমার কলিজা ফেটে যাচ্ছে। যে পরিমাণ পানি, ১৫ দিনেও যেতে পারবে না। ধান পানির নিচেই পচে নষ্ট হবে।’
কাওরাইদ ইউনিয়নের ধামলই গ্রামের মাছচাষি আরিফ মিয়া বলেন, ‘আমার মাছের খামার তলিয়ে গিয়ে অন্তত ২০ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে।’
একই ইউনিয়নের যোগীরছিট গ্রামের মাছচাষি লিটন মিয়া বলেন, ‘আমার পুকুরের পাড় ভেঙে ৩ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে।’
বরমী ইউনিয়নের বরকুল গ্রামের মাছচাষি মাজহারুল ইসলাম বলেন, মাছের খামারের বাঁধ ভেঙে সব মাছ নদীতে ভেসে গেছে।
মাওনা ইউনিয়নের চকপাড়া গ্রামের কৃষক আমিনুল ইসলাম বলেন, চকপাড়া গ্রামের শাকসবজির আদর্শ গ্রামে শত শত বিঘা জমিতে রোপণ করা শীতকালীন শাকসবজি নষ্ট হয়েছে। শাকসবজি খেতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। তাতে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভারী বৃষ্টিপাতে উপজেলার গাজীপুর নগরহাওলা গ্রামে মাটির ঘর ভেঙে নানি-নাতি গুরুতর আহত হয়েছে।
মাওনা চৌরাস্তা এলাকার ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম বলেন, মাওনা চৌরাস্তা এলাকার আশপাশের মহাসড়কসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বাসাবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পানি উঠেছে।
শ্রীপুর উপজেলা প্রকৌশলী রাকিবুল আহসান বলেন, ‘আমি সকাল থেকে বিভিন্ন রাস্তায় খোঁজখবর নিচ্ছি। কয়েকটি সড়কে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া কালভার্ট ভেঙে যাওয়া এবং সড়ক দেবে যাওয়ার ঘটনা রয়েছে।’
উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা ওহিদুল আবরার বলেন, অনেক মাছের খামার তলিয়ে মাছ ভেসে গেছে। তাতে ক্ষতির পরিমাণ বলা যাচ্ছে না। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মুহীতুল ইসলাম বলেন, মাটির ঘরবাড়ি ভেঙে আহত ব্যক্তিদের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।
জানতে চাইলে শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তরিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরের প্রধানদের সার্বিক খোঁজখবর নিতে বলা হয়েছে।