গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের মামলায় গ্রেপ্তার তিন আসামির রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তাজুল ইসলাম সোহাগ তাঁদের রিমান্ডে নেওয়ার নির্দেশ দেন। তবে আরও এক আসামির রিমান্ড শুনানির জন্য আগামী রোববার দিন ধার্য করা হয়েছে।
যাঁদের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে, তাঁরা হলেন তাজুল ইসলাম তাজ, শ্রাবণ সাহা উৎস ও অন্তু দেওয়ান।
তাজুল ইসলাম তাজ ও শ্রাবণ সাহা উৎসকে তিন দিন এবং অন্তু দেওয়ানকে দুদিনের রিমান্ডে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাজুল ইসলাম তাজ ও শ্রাবণ সাহা উৎস ভুক্তভোগীর সহপাঠী। আসামি অন্তু দেওয়ান একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষার্থী। আসামি দেলোয়ার ভূঁইয়ার রিমান্ড আবেদন শুনানির জন্য আগামী রোববার দিন ধার্য করা হয়েছে।
বিকেলে আশুলিয়া থানা-পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক সফিকুল ইসলাম সুমন তিন আসামির সাত দিন করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। একই সঙ্গে আসামি দেলোয়ারের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করার আবেদন করেন। কিন্তু দেলোয়ার পরে স্বীকারোক্তি দিতে অস্বীকৃতি জানালে তদন্ত কর্মকর্তা পুনরায় তা সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ৭ এপ্রিল বেলা ১১টার দিকে পিকনিকের কথা বলে ওই ছাত্রীকে আশুলিয়ার ফুলেরটেক এলাকায় একটি বাসায় নিয়ে যান অভিযুক্ত প্রথম তিনজন। যাওয়ার সময় তাঁকে কোমল পানীয়ের সঙ্গে অচেতন করার ওষুধ খাওয়ালে কিছুক্ষণ পর তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। বিকেল ৫টার দিকে জ্ঞান ফিরলে তিনি ওই বাসায় তিনজনকে দেখতে পান। তিনি বুঝতে পারেন, ওই তিনজন তাঁর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেছেন এবং তাঁর ভিডিও ও ছবি ধারণ করা হয়েছে।
এ সময় তিনি চিৎকার করলে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা তাঁকে অশ্লীল ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া ও অ্যাসিডে মুখ ঝলসে দেওয়ার হুমকি দেন। এরপর তাঁরা বিভিন্ন সময় একাধিক ধাপে হুমকি দিয়ে ৯৬ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন ভুক্তভোগীর কাছ থেকে।
সর্বশেষ গত ৬ নভেম্বর সকাল ৮টার দিকে তাঁকে ফের আশুলিয়ার বাইশমাইল এলাকায় আটকে ৪ নম্বর অভিযুক্ত ব্যক্তির সঙ্গেও শারীরিক সম্পর্ক করতে বলেন। এতে রাজি না হলে তাঁকে প্রথম তিন অভিযুক্ত ব্যক্তি মারধর করেন। একপর্যায়ে জোরপূর্বক নেশাজাতীয় পানীয় পান করান। তাঁদের কবল থেকে ছাড়া পেয়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে সেখানেই অচেতন হয়ে পড়েন। পরে তাঁকে প্রথমে গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর স্বজন বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দিলে আসামিরা আরও চড়াও হন।
চিকিৎসার পর তিনি ফের বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরলে ২৬ নভেম্বর অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দেখতে পান তিনি। একপর্যায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা তাঁকে একটি কক্ষে নিয়ে দরজা আটকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দেওয়া অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেন। এতে সায় না দিয়ে বের হতে গেলে তাঁকে গালিগালাজ করেন ও হুমকি দেন। পরে ২ ডিসেম্বর ওই শিক্ষার্থী আশুলিয়া থানায় মামলা করেন।