গাজীপুরে নিজ প্রাইভেট কারের ভেতর থেকে বৃহস্পতিবার সকালে টঙ্গীর শহীদ স্মৃতি স্কুলের প্রধান শিক্ষক জিয়াউর রহমান মামুন (৫১) ও তাঁর স্ত্রী আমজাদ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক মোছা. মাহমুদা আক্তার জলির (৩৫) মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এরই মধ্যে দুজনের মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা চিকিৎসকের সন্দেহ, এই শিক্ষক দম্পতিকে হত্যা করা হয়েছে।
ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান চিকিৎসক শাফি মোহাইমেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে এটি হত্যাকাণ্ড বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। ভিসেরা পরীক্ষার জন্য নমুনা পাঠানো হয়েছে। ওই প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।’
মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা পুলিশ কর্মকর্তা নাদিউজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে এটি হত্যাকাণ্ড। ভিসেরা পরীক্ষার জন্য অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) পাঠানো হবে। প্রতিবেদন পেলে বিস্তারিত বলা যাবে।’ তিনি জানান, তাঁদের ব্যবহার করা গাড়িটিও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। তবে এরই মধ্যে তদন্তকাজ চলছে। সন্দেহভাজন কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
এদিকে শিক্ষক জিয়াউর রহমান মামুনের ভাই আতিকুর রহমান আজ শুক্রবার সকালে আজকের পত্রিকাকে জানান, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে তাঁদের মরদেহ গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের ত্রিশালে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
শিক্ষক দম্পতির মরদেহ উদ্ধারের পর তাঁদের কর্মস্থল দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
বৃহস্পতিবার টঙ্গীর শহীদ স্মৃতি উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক নূরুজ্জামান রানা বলেন, প্রতিদিনের মতো বুধবার বিকেলে স্ত্রী জলি স্কুলে ক্লাস শেষে স্বামীর কাছে টঙ্গীর শহীদ স্মৃতি উচ্চবিদ্যালয়ে আসেন। সেখানে নিজেদের ব্যক্তিগত গাড়িতে শহীদ স্মৃতি উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কামরুজ্জামানকে নিয়ে মহানগরীর গাছা এলাকায় নিজ বাসার উদ্দেশে রওনা হন। পথে টঙ্গীর সাহেরা মার্কেট এলাকায় গাড়ি থেকে নেমে যান কামরুজ্জামান। পরে দীর্ঘ সময় বাসায় না ফেরায় রাত ২টার দিকে হঠাৎ করেই তাঁর ছেলে মেরাজ মোবাইল ফোনে জানান তাঁরা বাসায় ফেরেননি। পরে প্রধান শিক্ষক ও পাশে তাঁর স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধারের খবর পাই। ঘটনার পর বিদ্যালয়ে ছুটে আসেন তাঁর সহকর্মী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের দাবি করেন তিনি।
এ ঘটনায় আমজাদ আলী পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ডা. নাজিম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘জলি শিক্ষিকা হিসেবে অত্যন্ত বিনয়ী ছিলেন। শিক্ষার্থীরা তাঁকে পছন্দ করতেন। ঘটনাটি স্কুলের বাইরে ঘটায় আমি কিছুই জানি না। তবে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে থাকলে শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’
গাজীপুর মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার দেলোয়ার হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বুধবার গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গী এলাকার শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও তাঁর স্ত্রী স্কুল শেষে মহানগরীর গাছা এলাকায় নিজ বাসার উদ্দেশে রওনা হন। কিন্তু তাঁরা আর রাতে বাসায় ফেরেননি। স্বজনেরা অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাঁদের সন্ধান পাননি। আজ বৃহস্পতিবার ভোর ৫টার দিকে বাসায় ফেরার পথে গাছা থানাধীন বড়বাড়ী জয়বাংলা সড়কের বগারটেক এলাকায় নিজ প্রাইভেট কারের ভেতরে স্টিয়ারিংয়ে প্রধান শিক্ষক ও পাশে তাঁর স্ত্রীকে নিস্তেজ অবস্থায় পাওয়া যায়। পরে তাৎক্ষণিকভাবে তাঁদের গাড়ি থেকে বের করে উত্তরা নস্ট্রামস হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁদের মৃত ঘোষণা করেন।’