দেশের কোথাও বৈধ কোনো সিসা বার নেই। তবে রেস্তোরাঁর আড়ালে অসাধু ব্যবসায়ীরা অবৈধভাবে এসব সিসা বার পরিচালনা করেন বলে দাবি করেছেন মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) অতিরিক্ত মহাপরিচালক গোলাম আজম।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ডিএনসি সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমনটি জানান। মোহাম্মদপুর থেকে বিপুল পরিমাণ আইস, ইয়াবা, কুশ (হাইব্রিড ক্যানাবিস ইন্ডিকা স্ট্রেন) ও কোকেন উদ্ধারের ঘটনায় এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
ঢাকায় বৈধ সিসা বারের সংখ্যা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে গোলাম আজম বলেন, ‘ডিএনসির হিসাবে বনানীতে ২১টি সিসা বার ছিল। ধানমন্ডিতে একটি ছিল, কিন্তু সেটি অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সিসায় যদি ০ দশমিক ২ শতাংশ নিকোটিন থাকে তাহলে তাহলে এটি ‘খ’ শ্রেণির মাদক হিসেবে ধরা হয়। এক্ষেত্রে আমরা ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। কিন্তু কিছু ব্যবসায়ী উচ্চ আদালতে একটি রিট করে আমাদের কাজ থামিয়ে দিয়েছিল। এটা নিয়ে তারা আদালতে ভুল তথ্য দিয়েছিল। এখন আমরা তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। কোনো সিসা বারেরই অনুমোদন নেই। সবই অবৈধ।’
ডিএনসি অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, বনানীর থ্রি সিক্সটি ডিগ্রি নামের যে প্রতিষ্ঠানে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। সেখানে বৈধ কোনো সিসা বার ছিল না। মূলত, এটি একটি রেস্তোরাঁ। কিন্তু তারা অবৈধভাবে বার চালাচ্ছিল। এই প্রতিষ্ঠানের পূর্ব নাম ছিল এরাবিয়ান কোজি। এই নামে তাদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে দুটি মামলা করেছে ডিএনসি। পরবর্তীতে নাম পরিবর্তন করে একই কাজ চালিয়ে আসছিল। এখন পর্যন্ত ১২টি মামলা করা হয়েছে। তারা সুযোগ পেলেই এগুলো চালু করছে।
মাদকের অভিযানের বিষয়ে গোলাম আজম বলেন, গত সোমবার রাজধানীর আদাবর থানার বাইতুল আমান হাউজিং সোসাইটির একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে মো. খাইরুল ইসলাম রিয়ানকে (২৬) চার হাজার ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করা হয়।
তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে একই দিন শেখেরটেকের আরেকটি বাসায় অভিযান চালিয়ে একাধিক মামলার আসামি মিলন মোল্লার কাছ থেকে ১ কেজি ৬০০ গ্রাম আইস উদ্ধার করা হয়। এ মামলার মূলহোতা সৌরভ ইসলাম শান্ত ওরফে তোফায়েল হোসেন শান্ত এবং ইয়াছমিন আক্তার আঁখি পলাতক রয়েছেন। এর মধ্যে সৌরভ ইসলাম শান্ত ডিএনসির তালিকাভুক্ত মাদক কারবারি। তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় মাদক ও অস্ত্র আইনে একাধিক মামলা রয়েছে।
অন্যদিকে, একই দিনে পল্টন মডেল থানাধীন পুরাতন ডাক ভবন বৈদেশিক ডাক থেকে ২৮০ গ্রাম টেট্রা হাইড্রো কুশ উদ্ধার করা হয়। এ সময় মো. শহিদুল ইসলামকে (৪৫) গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার স্বীকারোক্তিতে শুকুর মোহাম্মদ রিপনকেও (৫০) গ্রেপ্তার করা হয়।
এ ছাড়া মঙ্গলবার ভোরে বাংলাদেশ কাস্টমস ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের যৌথ অভিযানে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গায়ানার নাগরিক কায়রান পেটুলা নামে এক নাগরিককে ৮ কেজি ৬০০ গ্রাম কোকেনসহ আটক করা হয়। এটি দেশের ইতিহাসে উদ্ধার হওয়া সর্বোচ্চ কোকেন। এর আগে ছিল ৮ কেজি ৩ গ্রাম।
বাংলাদেশে কোকেনের বাজার নেই জানিয়ে তিনি বলেন, এই নারী ব্রাজিল থেকে কোকেন সংগ্রহ করেন। এরপর তিনি নিউইয়র্ক ও কাতারের দোহার হয়ে ঢাকায় আসেন। এই ঘটনায় শুল্ক গোয়েন্দা মামলা করেছে। তবে শেষ গন্তব্য জানতে তদন্ত চলছে।
মাদকের মূলহোতারা গ্রেপ্তার না হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, মাদকের মামলাগুলো হয় যার কাছে পাওয়া যায় তার বিরুদ্ধে। এক্ষেত্রে আইনের আওতায় তাদের আনা সহজ হয় না। তবে যারা গডফাদার তাদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের মামলা দেওয়া হয়। এখন পর্যন্ত ১২টি মামলা দেওয়া হয়েছে।