মাত্র ১৫ দিনের চাকরি। সংসারের হাল ধরতে চাওয়া তরুণী নারগিস আক্তারের স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়ে গেল! পোড়া শরীর এতটাই বিকৃত যে মুখ দেখে কেউ চিনতে পারেননি। কিন্তু বাবা কখনো সন্তানকে চিনতে ভুল করেন না! পায়ে নূপুর দেখে মেয়ের লাশ শনাক্ত করলেন মো. ওয়ালিউল্লাহ।
চলতি মাসের ১ তারিখে গার্মেন্টসে যোগ দেন নারগিস আক্তার। মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি শেষ করে শুরু করেন কর্মজীবন। উদ্দেশ্য ছিল ফল বিক্রেতা বাবার দায়িত্বের ভাগ নেওয়া। চার বোন ও এক ভাইয়ের সংসারে তিনি ছিলেন বড় আশা। কিন্তু প্রথম বেতন পাওয়ার আগেই সবাইকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেলেন!
নারগিসের বোন মৌসুমী আক্তার আজ বুধবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে লাশের অপেক্ষায় থাকার সময় আজকের পত্রিকাকে জানান, আগুন লাগার পরপরই পরিবার নিয়ে তাঁরা মিরপুর রূপনগর এলাকায় ছুটে যান। গিয়ে দেখেন, যে গার্মেন্টসে নারগিস কাজ শুরু করেছিলেন, সেখানেই ভয়াবহ আগুন। বিকেলের পর একে একে পোড়া মরদেহ বের করা হচ্ছিল। মুখ দেখে কিছুই বোঝা যাচ্ছিল না। কিন্তু বাবা মেয়েকে চিনে ফেলেন শুধু পায়ে নূপুর দেখে, যোগ করেন মৌসুমী।
মৌসুমীর অভিযোগ, ‘আগুন লাগার অনেক পরে ফায়ার সার্ভিস এসেছে। তারা শুধু আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছে, কারখানার ভেতরে ঢুকে কাউকে উদ্ধার করেনি। তাই এত মানুষ পুড়ে মারা গেছে।’
মৌসুমী আরও জানান, নারগিসের লাশ মঙ্গলবার রাতেই শনাক্ত হয়, আজ ডিএনএ নমুনা নেওয়া হবে। বাবার নমুনা সংগ্রহের পরই আনুষ্ঠানিকভাবে লাশ হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হবে।
এদিকে মিরপুর রূপনগরের রাসায়নিক গুদাম ও সংলগ্ন পোশাক কারখানায় গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আগুন লাগে। এতে এখন পর্যন্ত ১৬ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ। আরও তিনজন ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
রূপনগর থানার ওসি (তদন্ত) মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত সাতটি মরদেহের দাবিদার স্বজন এসেছেন। ঢাকা মেডিকেলে আরও কিছু মরদেহের দাবিদার এসেছেন বলে জেনেছি। সবার ডিএনএ নমুনা রেখে ময়নাতদন্তের পর মরদেহ হস্তান্তর করা হবে। ময়নাতদন্ত ও শনাক্তকরণ শেষে স্বজনদের কাছে মরদেহ বুঝিয়ে দেওয়া হবে।’
এদিকে রাসায়নিক গুদামের আগুন এখনো পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। বিষাক্ত রাসায়নিকের ধোঁয়ায় আশপাশের অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। বিশেষ পোশাক পরে গুদামের ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করছে ফায়ার সার্ভিস।