রাত তখন প্রায় দেড়টা। চারপাশ নিস্তব্ধ। ঠিক সেই সময় মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের একটি কোণে হঠাৎই দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে আগুন। মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে। আগুনের গ্রাসে পুড়ে ছাই হয়ে যায় তিনটি দোকান—তার মধ্যে একটি ‘আল মদিনা স্টোর’, যা ছিল ফারজানা আক্তারের সারা জীবনের সঞ্চয়ে গড়া সম্বল।
‘দোকানটা আমার সন্তানের মতো ছিল, ’ চোখের পানি মুছতে মুছতে বলেন ফারজানা। ‘এক যুগের পরিশ্রম, স্বপ্ন, সবকিছু এই আগুন নিয়ে গেল। আমাদের সংসার তো এই দোকান ঘিরেই ছিল।’
আল মদিনা স্টোরে বিক্রি হতো পর্দা, বিছানার চাদর, কভার। দোকানটি ছোট, কিন্তু ফারজানার জীবনের পুরোটা জুড়ে ছিল এর অস্তিত্ব। আগুনের তীব্রতা এতটাই ছিল যে কিছুই রক্ষা করা যায়নি। পুড়ে যাওয়া দোকানের কালো ছাইয়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা ফারজানা এখন দিশেহারা।
ফারজানার দোকানের পাশেই ছিল আরও দুটি দোকান, সেগুলোর মালিকেরাও সমানভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। কারও দোকানে ছিল ইলেকট্রনিক সামগ্রী, কারও কাপড়ের ব্যবসা— সবই এখন ভস্ম।
ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক কাজী নজমুজ্জামান জানান, দাহ্য বস্তু থাকার কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তিনি বলেন, ‘লোকজন আমাদের সহযোগিতা করেছে, তবে উৎসুক জনতা কখনো কখনো অগ্নিনির্বাপণে বাধাও সৃষ্টি করেছে।’
ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিটের টানা চেষ্টায় আরও বড় বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব হয়েছে, কিন্তু তিনটি দোকানের ক্ষয়ক্ষতি অপূরণীয়। ফারজানার মতো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য এই ক্ষতি শুধুই আর্থিক নয়—এটি এক ধরনের মানসিক ধাক্কা। ‘আমাদের জন্য কি কেউ এগিয়ে আসবে?’ — সহযোগিতার আকুতি ফারজানার।
গতকাল রোববার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে আগুন লাগে। খবর পেয়ে রাত ১টা ৫০ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচ ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। দুই ঘণ্টার চেষ্টায় রাত ৩টা ৫০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।