হৃদ্রোগসহ শারীরিক নানা জটিলতা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি ক্যাসিনোর মূল হোতা ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট আরও এক সপ্তাহ হাসপাতালে থাকবেন বলে জানিয়েছেন তাঁর চিকিৎসকেরা। আগামী সোমবার বোর্ড সভার মিটিংয়ে হাসপাতাল থেকে তাঁকে ছাড়া হবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন চিকিৎসকেরা।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে সম্রাটের শারীরিক অবস্থা নিয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন হাসপাতালের পরিচালকের নেতৃত্বে চিকিৎসকেরা।
কার্ডিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ রায়হান মাসুম মন্ডল বলেন, ‘সম্রাটের হার্টের এমন কিছু ক্রিটিক্যাল অবস্থা আছে, যেকোনো সময় মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এ ছাড়া আছে ভাল্বের সমস্যা। দূর থেকে অনেকটা সুস্থ মনে হলেও চিকিৎসক হিসেবে দেখলে বোঝা যায় ওনার দেহে যেন একটা বোম বাঁধা রয়েছে। রাতের বেলায় হার্টের ঝুঁকির মাত্রা আরও বেড়ে যায়। ওনাকে কারাগারে নিতে বিভিন্ন সময়ে জেল কর্তৃপক্ষ কাগজ পাঠিয়েছে। আমরা কখনো বলিনি যে নিতে পারবে না। আমরা কেবল রোগীর অবস্থা জানিয়েছি। বর্তমানে সম্রাটের হার্ট স্বাভাবিক রয়েছে। তবে কিছু জটিলতা এখনো আছে। আমরা পুরো এক মাসের একটা রিপোর্ট তৈরি করব। আমাদের সব ধরনের চিকিৎসার সক্ষমতা আছে। পরিবার চাইলে বাইরেও নিতে পারবে। মেটালিক ভাল্ব কী অবস্থায় আছে সেটি দেখতে হবে।’
তবে ইলেকট্রিক ভাল্বের যে আধুনিক প্রযুক্তি দরকার, সেটি এই হাসপাতালে নেই বলে জানান কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. হারিসুল হক।
অধ্যাপক ডা. হারিসুল হক বলেন, ‘এই প্রযুক্তিতে আমাদের এখনো দুর্বলতা রয়েছে। এতটা সক্ষম নই। আরও এক সপ্তাহ ওনার হাসপাতালে থাকতে হতে পারে। ওনার (সম্রাটের) ভালো চিকিৎসা দরকার। যেহেতু এখন আইনি বাধা উঠে গেছে, তাই চাইলে স্বজনেরা বাইরে চিকিৎসা করাতে নিতে পারেন। আগামী সোমবার আরও একটি বোর্ড সভা বসবে। সেখানেই আমাদের সিদ্ধান্ত জানানো হবে।’
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নজরুল ইসলাম বলেন, ‘দেড় বছর ধরে এখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি। সম্রাটের ৩১-৩৩% হার্টের ফাংশনাল ছিল। তিনি আসামি হলেও আমাদের কাছে একজন রোগী। সেই হিসেবেই আমরা দেখেছি তাঁকে। ওনার শারীরিক অবস্থা স্বাভাবিক নয়। এমনকি বিছানা থেকে টয়লেটে যেতেও কষ্ট হয়। আমরা শঙ্কায় ছিলাম যে আমাদের কোনো অবহেলার কারণে কোনো দুর্ঘটনা ঘটে কিনা।’
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নজরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘গতকাল বুধবার পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে প্রশাসন কিংবা কারা কর্তৃপক্ষের কেউ যোগাযোগ করেননি। আজ সকালে প্রশাসনের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে। ওনাকে ছাড়া যাবে কি না, দায়িত্বরত চিকিৎসকেরা বলতে পারবেন। স্বজনেরা চাইলে অন্য কোথাও চিকিৎসা নিতে পারেন।’
প্রসঙ্গত, ক্যাসিনো ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগে ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর সম্রাটকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। পরে তাকে নিয়ে দুপুর দেড়টার দিকে তার কাকরাইলের কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়। এ সময় ভেতর থেকে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ, ইয়াবা, পিস্তল ও বিরল প্রজাতির বন্যপ্রাণীর চামড়া উদ্ধার করা হয়। বন্যপ্রাণীর চামড়া রাখার দায়ে তাঁকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
পরদিন র্যাব বাদী হয়ে সম্রাটের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করে। সেই সব মামলা তদন্ত করতে গিয়ে সম্রাটের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার এবং জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। পরে সিআইডি অর্থ পাচারের অভিযোগে এবং দুদক জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আরও দুটি মামলা করে।