মহাসড়কে পণ্যবাহী গাড়িতে চাঁদাবাজির অভিযোগে ৩২ জনকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। তারা চাঁদার জন্য ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে হতাহতের ঘটনাও ঘটাত বলে জানিয়েছে র্যাব।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে উত্তরার র্যাব-১-এর কার্যালয়ে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক মুহাম্মদ মোসতাক আহমদ এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
এর আগে রাজধানীর উত্তরা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় গতকাল বুধবার রাত থেকে আজ ভোর পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন—রাকিব হাসান রাব্বি (২০), মো. টুটুল ইসলাম (১৯), মো. ইমন (১৮), মো. ইফসুফ (২২), মো. জোনায়েত (১৯), মো. সিয়াম (১৮), মো. হাবিবুল্লাহ (৩৫), মো. জিহাদুর রহমান (২৪), মো. জাহিদুল ইসলাম ওরফে জাহিদ (২৪), আকাশ মিয়া (২৬), নান্নু হোসেন (২৭), মো. মাসুদ (৪০), রাজীব সরকার (৩২), জাকির হোসেন (৪১), আমজাদ হোসেন (৫৫), ইসমাইল সরকার (৪২), শাহেদ সরকার (৩০), মো. মোস্তফা (৩৫), আবুল কালাম (৫০), সোহাগ মিয়া (৩৭), মো. মাসুম (৩৫), আনিছ মিয়া (৩৫), মো. রাব্বি (১৯), জয়দেব সূত্রধর (২০), ফারুক আহম্মেদ (৩৮), মো. স্বপন (৪০), মো. জুলহাস (৩০), মেহেদী হাসান হৃদয় (২৩), মো. ইব্রাহীম (৪৬), আনোয়ার হোসেন বাবু (৪৫), সবুজ মিয়া (৩৭) ও মনির হোসেন (৩৫)।
গ্রেপ্তারকালে তাঁদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের নগদ ১ লাখ ২ হাজার ৮৬৫ টাকা, ছয়টি টর্চলাইট, তিনটি টার্গেট লাইন, একটি চার্জার লাইট, ২৯টি চাঁদা আদায়ের রসিদ, চারটি রিফ্লেক্টিং বেস্ট জ্যাকেট, দুটি লাঠি, ২৫টি মোবাইল ফোন এবং একটি হেডফোন জব্দ করা হয়।
র্যাব-১-এর অধিনায়ক মোসতাক আহমদ বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকাসহ সারা দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে দেশের সব শ্রেণির নাগরিকেরা বাজার করতে গিয়ে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় খুচরা বাজারে অধিক দামে সবজি বিক্রয়ের ব্যাপারে জনমনে অসন্তোষ পরিলক্ষিত হয়। যেখানে পাইকারি ও খুচরা বাজারে সবজির মূল্যে তারতম্য দেখা যায়।
র্যাব-১-এর অধিনায়ক বলেন, এই জনদুর্ভোগ দূর করার লক্ষ্যে র্যাব ফোর্সেস সদর দপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী রাজধানীসহ সারা দেশে র্যাবের বিভিন্ন ইউনিটের গোয়েন্দা দল তাঁদের নিজ নিজ দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় পাইকারি বাজারসহ বিভিন্ন স্থানের চাঁদাবাজির তথ্য উদ্ঘাটনের জন্য কাজ শুরু করে। পরে জানা যায়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের উৎপাদনকারীদের কাছ থেকে পণ্যসামগ্রী সংগ্রহপূর্বক ট্রাক বা পণ্যবাহী যানবাহনে পাইকারি ও খুচরা বাজারে পৌঁছানোর সময় পথিমধ্যে নামে-বেনামে ভুয়া রসিদ অথবা কখনো কৌশলে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে বিপুল পরিমাণ অর্থ চাঁদাবাজি করা হয়।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ এবং গাজীপুরের বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়কে পণ্যবাহী গাড়িতে চাঁদাবাজি করে। তারা কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে প্রতি রাতে সড়ক-মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার ওপর অবস্থান নেয়। পরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পণ্যবাহী যানবাহন রাজধানীতে প্রবেশের সময় তারা রিফ্লেক্টিং বেস্ট জ্যাকেট, লেজার লাইট, লাঠি ও বিভিন্ন সংকেতের মাধ্যমে গাড়ি থামিয়ে ড্রাইভারদের কাছে অবৈধভাবে চাঁদা আদায় করে থাকে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা চাঁদা আদায়ের রসিদও প্রদান করে থাকে। ড্রাইভাররা তাদের চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তাদের গাড়ি ভাঙচুর, ড্রাইভার-হেলপারকে মারধরসহ প্রাণনাশের হুমকি দেয়।
মোসতাক আহমেদ বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা প্রতিটি ট্রাক ও পণ্যবাহী যানবাহন থেকে ২০০-৩০০ টাকা চাঁদা আদায় করত। পণ্যবাহী কোনো গাড়ি দেখলেই তারা লেজার লাইটের আলো নিক্ষেপ করে তা থামিয়ে কৌশলে বিভিন্ন অজুহাতে চাঁদা আদায় করে থাকে। বিশেষ করে মধ্যরাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় যখন পণ্যবাহী ট্রাক ঢাকা প্রবেশ করে, তখন তাদের চাঁদাবাজি শুরু হয়। চক্রটি ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতি রাতে পণ্যবাহী গাড়ির চালকদের কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা চাঁদা আদায় করে থাকে বলে জানা যায়।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানিয়েছেন র্যাবের এই কর্মকর্তা।
রমজান উপলক্ষে অবৈধভাবে পণ্য মজুতকারীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে র্যাব-১-এর অধিনায়ক মোসতাক আহমদ বলেন, যারা আসন্ন পবিত্র মাহে রমজানকে কেন্দ্র করে অবৈধভাবে পণ্য মজুত করে কারসাজির মাধ্যমে নিত্যপণ্যের বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করবে, র্যাব ফোর্সেসের নির্দেশনাক্রমে র্যাব-১ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসহ তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
তিনি বলেন, র্যাব ফোর্সেস সম্মানিত নাগরিক সমাজকে আহ্বান জানাচ্ছে—যারা কারসাজির মাধ্যমে নিত্যপণ্যের অবৈধ মজুত করবে তাদের সম্পর্কে তথ্য দিয়ে র্যাবকে সহায়তা করতে, এ ক্ষেত্রে তথ্য প্রদানকারীর পরিচয় গোপন রাখা হবে।