ডাকসু নির্বাচনে এক মুক্তিযোদ্ধা ও গণ-আন্দোলন পদপ্রার্থীকে ‘গণধর্ষণের’ হুমকিদাতা আলী হুসেনের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ। আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানায় বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) সমর্থিত প্যানেলটি।
সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনী কর্তৃক ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের ওপর হামলা ও নীলফামারীতে একজনকে হত্যার অভিযোগ এনে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানায় তারা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্যানেলের ভিপি, এজিএস প্রার্থীসহ অন্যরা।
আলী হুসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। তবে তিনি ‘শিবির নেতা’ বলে দাবি করেছে ছাত্রদল।
সংবাদ সম্মেলনে ভিপি প্রার্থী আব্দুল কাদের বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা প্রশ্ন যে, ডাকসু নির্বাচন আদৌ হবে কি না বা ডাকসু হলেও সুষ্ঠু পরিবেশে হবে কি না। ফ্যাসিস্টদের আমলে গণতান্ত্রিক চর্চায় যে ষড়যন্ত্র হতো, ৫ আগস্টের এক বছর পার হলেও এখনো ষড়যন্ত্র অব্যাহত। গতকাল আমরা হাইকোর্টের রায়কে কেন্দ্র করে তা স্পষ্টত হয়েছি।’
আব্দুল কাদের আরও বলেন, ডাকসুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীরা নেবেন। তাঁরা নতুন পরিবেশ ও বন্দোবস্ত হাজির করবেন।
হাইকোর্টের উদ্দেশে কাদের বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে আপনারা অবস্থান নেবেন না। শিক্ষার্থীরা নিজেদের জীবন দিয়ে নতুন পরিবেশ সৃষ্টি করেছে, নতুন করে ফিতনা-ফ্যাসাদ সৃষ্টি করবেন না বা শিক্ষার্থীদের খেপিয়ে দেওয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি করবেন না। আমরা মনে করছি, গতকাল ডাকসু নির্বাচন স্থগিত করার হাইকোর্টের যে আদেশ ছিল, তা একটি গভীর ষড়যন্ত্র।’
নারী হেনস্তা নিয়ে আব্দুল কাদের বলেন, ‘মতের ভিন্নতা মতাদর্শ থাকার কারণে নারীদের আমরা বিভিন্নভাবে ট্রিট করি। একদল মনে করে, হিজাব-নিকাব পরা মানেই নারী। এই বদ্ধমূল ধারণার বাইরে যারা, তারা নারী হিসেবে অগ্রাধিকার পাবে না, নারী বলতে তার কোনো অধিকার নাই। তারা মনে করে, তাদের হেনস্তা করা যাবে, জুম করে ভিডিও করা যাবে, লাথি মারা যাবে। আবার আরেকটি অংশ মনে করে, যারা ওয়েস্টার্ন পোশাক পরে, তাদের বাইরে অন্যদের কোনো অধিকার নাই। নারীদের জন্য আমরা একটা গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও কমফোর্ট জোন চাই। আমরা নারী হেনস্তার নিষ্পত্তির জন্য সাইবার সিকিউরিটি সেল গঠন করব।’
আব্দুল কাদের আরও বলেন, ‘আমরা দেখেছি, ৫ আগস্টের পরে ছাত্রশিবির ঢাবির মাটিতে আত্মস্বীকৃত রাজাকারদের ‘‘বিচারিক হত্যাকাণ্ডের শিকার’’ বলে নরমালাইজ করার চেষ্টা করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে নারী শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ করেছে। সে সময় শিবিরের এক নেতা এক নারী শিক্ষার্থীকে জুম করে ভিডিও করার চেষ্টা করেছে। তার মানে, তার মনোজগতের জায়গাটা এটা, যে নারী তার মতাদর্শের বাইরে গিয়ে প্রতিবাদ করবে, সে নারী না। তারা মনে করে, জুম করে ভিডিও করা জায়েজ, হেনস্তা করা জায়েজ—এমনকি নারীকে লাথি যিনি মেরেছেন, তাঁকে ফুলের মালা দেওয়াও জায়েজ। আমরা বারবার বলে আসছি, নারীদের নিরাপত্তা ও গণতান্ত্রিকে ঐকমত্যে আসা উচিত।’
শিবিরকে গুপ্ত রাজনীতি থেকে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়ে আব্দুল কাদের বলেন, বিগত দিনে আপনারা আপনাদের স্বার্থের জন্য চুপ, ছুপা বা গুপ্ত রাজনীতি করেছেন। গণ-অভ্যুত্থানে মানুষ জীবন দিয়ে বর্তমানে আপনাদের গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছে। কিন্তু আপনারা যদি এখনো মনে করেন, চুপ থেকে ছুপা বা গুপ্ত রাজনীতি করে নোংরামো চালিয়ে যাব, আবার মনে করছেন, গুপ্ত রাজনীতি করে অ্যাডভ্যান্টেজ নেবেন, সেটা কখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হতে দেবে না, আমরা হতে দেব না।’
‘গণধর্ষণের’ হুমকিদাতা আলী হুসেন শিবির নেতা কি না—সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে আব্দুল কাদের বলেন, ‘আমরা এর আগেও বারবার গুপ্ত রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে বলেছি। বলেছি, হলে কতজন আপনাদের (শিবির) হয়ে কাজ করে বা আছে—তা প্রকাশ করুন। ফরহাদ বলেন, হলে কারা শিবির করে সবাই জানে। তাহলে তাঁর কথা অনুযায়ী, অফলাইন ও অনলাইন দেখে আমরা বলতে পারি, আলী হুসেন শিবির কর্মী। আপনারা গুপ্ত রাজনীতি করবেন আবার ধরা খেলে অস্বীকার করবেন, তা তো হয় না। আপনাদের রাজনীতি স্পষ্ট হতে হবে, প্রকাশ্যে আসতে হবে।’