ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। নদী থেকে পানি উপচে আধা পাকা আউশ ধান তলিয়ে যাচ্ছে। সপ্তাহখানেক পর মাঠ থেকে এসব ধান ঘরে তোলার প্রস্তুতি ছিল কৃষকদের। চোখের সামনে কষ্টের ধান তলিয়ে যাওয়ায় কাঁদছেন অনেক কৃষক।
অনেকেই আবার পানির নিচ থেকে আধা পাকা ধান কেটে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন। তবে এরই মধ্যে বেশির ভাগ ধান পানিতে তলিয়ে গেছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
গতকাল রোববার সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার বেশ কিছু মাঠে আউশ ধান আধা পাকা অবস্থায় বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। ওই মাঠগুলোতে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত শুধু পানি। এসব মাঠে স্থানীয় কৃষকেরা আউশ ধানের পাশাপাশি খালি জমিতে সপ্তাহখানেক আগে নতুন করে আবাদ করেছিলেন রোপা আমন ধান। এখন উপজেলার সব মাঠে আধা পাকা আউশ ও নতুন আবাদ করা আমন ধান বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। আবার কোনো কোনো মাঠে কৃষকেরা পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে পানির নিচ থেকে আধা পাকা ধান কেটে বাড়িতে আনছেন।
উপজেলার দীর্ঘভূমি গ্রামের কৃষক কাজল সরকার বলেন, ৩০ শতক জমিতে আউশ ধানের আবাদ করেছিলেন। পরিশ্রমে ফলানো সেই ধান কয়েক দিন পর ঘরে তোলার কথা থাকলেও বন্যায় তা তলিয়ে গেছে। তাই কোমরপানিতে নেমে আধা পাকা ধান কেটে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন।
কৃষক ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘আমার স্বপ্নের ফসল বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এখন আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে কী খেয়ে বাঁচব, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।’
কৃষক ছালে আহমেদ বলেন, ‘কষ্টে ফলানো ধান এভাবে বন্যার পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে দেখে কষ্ট সইতে পারছি না। কামলা না পেয়ে নিজেই ধান কাটতে পানিতে নেমে গেছি। যেভাবে দিনে দিনে পানি বাড়ছে, আল্লাহই ভালো জানেন, কতটুকু ধান ঘরে তুলতে পারি।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাসুদ রানা বলেন, সম্প্রতি বন্যায় ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় দুই হাজার হেক্টর জমির আউশ ধান তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া রোপা আমনের ১৬০ হেক্টর বীজতলা ও আবাদ করা আমন ১ হাজার ২০০ হেক্টর এবং ২০০ হেক্টর জমির শাকসবজি নিমজ্জিত হয়ে গেছে। তিনি বলেন, এখনো যেসব জমির ধান কাটা সম্ভব, সেগুলো কেটে ঘরে তোলার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।