কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় সোনালুগাছে গাছে ঝুলছে ফুল। সবুজ পাতা ছাপিয়ে সোনালি রঙের ফুলে সেজেছে গাছ। প্রতিটি গাছের শরীর থেকে যেন হলুদ ঝরনা নেমে এসেছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বাড়ির আঙিনায়, পুকুরের পাড়ে ও রাস্তার ধারে সোনালুগাছগুলো ফুলে ফুলে শোভিত হয়ে আছে। এ ফুল আকৃষ্টে হচ্ছেন পথচারীরা। সড়কে চলাচলকারী মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহন আরোহীরাও মুগ্ধ চোখে দেখছেন সোনালু ফুলের গাছগুলো।
সোনালুগাছ পাতা ঝরা মাঝারি আকৃতির বৃক্ষ। আট থেকে নয় মিটার উঁচু হয়। হলুদ এ ফুল দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি আছে বাহারি সব নাম। পরিচিত নামগুলোর মধ্যে আছে সোনালু, সোনাইল, সোঁদাল, বান্দরলাঠি ইত্যাদি। সোনালুর বৈজ্ঞানিক নাম ক্যাসিয়া ফিস্টুলা, ইংরেজি নাম গোল্ডেন শাওয়ার ট্রি। বানরের প্রিয় খাবার সোনালুর ফুল, ফল ও পাতা। সোনালু কাঠের রং ইটের মতো লাল।
ব্রাহ্মণপাড়ায় সবচেয়ে বেশি সোনালুগাছ চোখে পড়েছে মাধবপুর ইউনিয়নের মকিমপুর এলাকায়। এই ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ উপজেলার মকিমপুর গ্রামের সজল আহমেদ বলেন, ‘আমরার গেরামতে বাইরনের সময় সড়কের ধারে দুইডা হুনাইল গাছ আছে। এইডিতে অহন ফুল ধরছে। অনেক সুন্দর লাগে। আমরার এগুল এই ফুলেরে হুনাইল ফুল আর না হয় বান্দরের লাডি ফুল কয়। এলাকার ছুডু ছুডু পুলা, পুরিপাইন এই ফুল পাইরা নিয়া খেলায়।’
একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী শাহদাত হোসেন বলেন, ‘এই সময়ে আমি যতবার মোটরসাইকেল নিয়ে মকিমপুর গ্রামের সড়ক দিয়ে যাতায়াত করি, কিছুটা সময় হলেও মোটরসাইকেল থামিয়ে এই ফুলের শোভা উপভোগ করি। তবে যখন দেখি স্থানীয় শিশু-কিশোররা এসব ফুল ও ডালা ভেঙে নিয়ে যায় তখন মন খারাপ হয়।’
স্কুলশিক্ষক এরশাদ মিয়া বলেন, ‘আমি মকিমপুর এলাকার বাসিন্দা এবং স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসার পথে মকিমপুর সড়কের সোনালু ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করি। শিক্ষার্থীরাও বিদ্যালয় থেকে আসা-যাওয়ার পথে এসব ফুল গাছের নিচে দাঁড়িয়ে তার সৌন্দর্য উপভোগ করে। অনেক শিক্ষার্থী আবার গাছ থেকে সোনালু ফুল পেড়ে বাড়িতে নিয়ে যায় খেলা করার জন্য।’
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা বন কর্মকর্তা মাহাবুব আলম বলেন, সোনালুগাছ একটি বনজ শোভাবর্ধনকারী গাছ। এটি ভারত উপমহাদেশের একটি গাছ। এই শোভাবর্ধনকারী বৃক্ষ, পাখিদের আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করে। গাছের উজ্জ্বল হলুদ ফুল মৌমাছি ও প্রজাপতিদের আকর্ষণ করে পরাগায়নের সহযোগিতা করে। এই গাছ মূলত সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য লাগানো হয়ে থাকে। সোনালুগাছের সঙ্গে কৃষ্ণচূড়া, পলাশ প্রভৃতি গাছ লাগালে আরও বেশি সৌন্দর্যবর্ধন করে। ব্রাহ্মণপাড়ার বিভিন্ন সড়কের সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য এসব গাছের চারা রোপণ করা হবে বলে জানান এ বন কর্মকর্তা।