মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাজাকে কেন্দ্র করে কক্সবাজারের চকরিয়ায় মিছিলে সংঘর্ষে গুলিতে নিহত হয়েছিলেন জামায়াতের এক কর্মী। সেই দিন মিছিলে অংশ নেন কক্সবাজার–১ (চকরিয়া–পেকুয়া) আসনের আওয়ামী লীগদলীয় সংসদ সদস্য জাফর আলমও।
সাদা পাঞ্জাবি-পায়জামা আর মাথায় হেলমেট পরা এমপি জাফর আলমের সামনে–পেছনে ছিলেন দুজন অস্ত্রধারী। তাঁর পাশে থেকেই অস্ত্র উঁচিয়ে ফাঁকা গুলি করতে দেখা যায় দুজনের একজনকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি ভিডিও ও ছবিতে মিছিলে এমপিকে দেখা গেছে।
অস্ত্রধারীদের মিছিলে অংশ নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে আজ শনিবার সন্ধ্যায় সংসদ সদস্য জাফর আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ওই সময় তিনি বড়ইতলী ইউনিয়নে ত্রাণ দিতে গিয়েছিলেন। ঘটনাস্থলে ছিলেন না।
ঘটনার পরপরই চকরিয়া থানার ওসি জাবেদ মাহমুদ দাবি করেন, পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো গুলি করা হয়নি। তাহলে কাদের গুলিতে ফোরকান নিহত হলেন, আজ শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তা নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ। এমনকি মিছিলে কাদের হাতে অস্ত্র ছিল, এখনো সেটাও জানে না পুলিশ।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাবেদ মাহমুদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা বেশ কয়েকজনের নাম পেয়েছি। তাঁদের তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করছি। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে আটক বা মিছিলে থাকা অস্ত্র জব্দ করা যায়নি।’
এ ছাড়া সাদা গেঞ্জি পরা আরেক অস্ত্রধারীর যে ছবি ছড়িয়ে পড়েছে, তাঁর নাম মোহাম্মদ ইউসুফ। তিনি উপজেলার চিরিংগা ইউনিয়নের সওদাগরঘোনা এলাকায় থাকেন। তিনি এমপির ক্যাডার হিসেবে পরিচিত।
ঘটনার কয়েকটি ভিডিও ও ছবি বিশ্লেষণ ও জানাজায় আসা লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৫ আগস্ট বিকেল ৪টার দিকে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাজাকে কেন্দ্র করে পৌরসভার মামা-ভাগিনা মাজার এলাকায় জামায়াতের কর্মী-সমর্থকেরা পুলিশ ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তার দুটি গাড়িতে ভাঙচুর করে। এর ১৫-২০ মিনিটের মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের ১২০ থেকে ১৩০ জন পৌরশহরের থানার রাস্তার মাথা থেকে মিছিল বের করেন। মিছিলে কালো পাঞ্জাবি পরা এক অস্ত্রধারীকে গুলি করতে দেখা যায়। এ সময় লোকজন দোকানপাট বন্ধ করে ছুটতে থাকে। এমপি জাফর আলমকে মাঝখানে রেখে মিছিলটি মহাসড়কের চিরিংগা পুরোনো বাসস্টেশনের দিকে যাচ্ছিল। পরে মিছিলটি মহাসড়কের বাইতুশ শরফ রোডে গেলে অস্ত্রধারীরা দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়।
ফোরকানের পরিবারকে এমপির লাখ টাকার অনুদান
নিহত জামায়াতের কর্মী ফোরকানুর রহমানের (৫৫) জানাজা গত বুধবার উপজেলার আব্দুলবারীপাড়ার একটি জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন এমপি জাফর আলম। জানাজার সময় এমপি ফোরকানের পরিবারকে নগদ এক লাখ টাকা ও পাকা বাড়ি করে দেওয়ার ঘোষণা দেন। ফোরকানের পরিবারের ভরণপোষণের জন্য মাসিক পাঁচ হাজার করে টাকা দেওয়ার আশ্বাসও দেন এমপি। এই নিয়ে স্থানীয় লোকজন, প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মাঝে নানা কানাঘুষা চলছে।
ফোরকান নিহত হওয়ার পর এমপি জাফর তাঁর পরিবারকে নানাভাবে চাপ দেন, তাঁরা যেন ফোরকানের রাজনৈতিক পরিচয় গোপন রাখেন—এ অভিযোগ তুলে স্থানীয় লোকজনের সন্দেহ, আওয়ামী লীগের গুলিতে ফোরকান মারা গেছেন বলেই এমপি এক লাখ টাকার অনুদান দিয়েছেন। এমনকি তাঁর পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিয়েছেন।
এ বিষয়ে এমপি জাফর আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, তিনি টাকা দিয়েছেন বিষয়টি সত্য। তবে গুলির ঘটনার জন্য নয়, নিহত ফোরকান তাঁর আত্মীয়।