অবশেষে চট্টগ্রামের রাউজান থেকে ১৩ দিন আগে অপহরণ হওয়া স্কুলশিক্ষার্থীর খণ্ডিত দেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল রোববার রাতে গ্রেপ্তার হওয়া যুবকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী আজ সোমবার ভোর থেকে রাউজানের কদলপুর-রাঙ্গুনিয়া সীমান্তবর্তী দলুছড়ি পাহাড়ি এলাকার বিভিন্ন স্থান থেকে দেহের খণ্ডিত অংশগুলো উদ্ধার করা হয়।
এদিকে গ্রেপ্তার ওই যুবককে সঙ্গে নিয়ে ফেরার পথে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী পুলিশের গাড়ি আটকে তাঁকে ছিনিয়ে নেয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। এরপর তাদের গণপিটুনিতে ওই যুবকের মৃত্যু হয় বলে জানানো হয়েছে। এ সময় পুলিশের কয়েকজন সদস্য আহত হওয়াসহ এলাকাবাসী তাদের গাড়ি ভাঙচুর করেছে বলেও পুলিশ জানিয়েছে।
নিহত স্কুলছাত্রের নাম শিবলী সাদিক হৃদয় (২০)। তিনি উপজেলার কদলপুর ইউনিয়নের পঞ্চপাড়া গ্রামের মো. শফিক ড্রাইভারের ছেলে। মারধরে নিহত যুবক হলেন উমংচিং মারমা (২৬)।
নিহত হৃদয়ের পরিবার ও স্থানীয়রা বলছে, শিবলী সাদিক হৃদয় পড়াশোনার পাশাপাশি কদলপুরে একটি মুরগির খামারে চাকরি করতেন। তিনি কদলপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন। গত ২৮ আগস্ট দিবাগত রাতে ওই মুরগির খামার থেকে হৃদয়কে অপহরণ করা হয়। অপহরণের দুই দিন পর অপহরণকারীরা তাঁর পরিবারে কল দিয়ে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।
পরিবার অপহরণকারীদের সঙ্গে কথা বলে দুই লাখ টাকা দিতে সম্মত হয়। এর কয়েক দিন পর হৃদয়ের বাবা শফিক বান্দরবান এলাকায় ডুলাপাড়া নামক স্থানে গিয়ে দুজনের হাতে দুই লাখ টাকা তুলে দেন। কিন্তু এরপরও হৃদয়কে মুক্তি না দেওয়ায় পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে রাউজান থানায় মামলা করেন হৃদয়ের বাবা।
পরিবার সূত্রে আরও জানা যায়, হৃদয় যে মুরগির খামারে চাকরি করতেন সেখানে সবাই ছিলেন চাকমা যুবক। মুরগির খামারে চাকরি করা চাকমা যুবকদের দেখাশোনার দায়িত্ব ছিল হৃদয়ের। দুই মাস আগে খামারে চাকমা যুবকদের সঙ্গে হৃদয়ের ঝগড়া হয়। পরে মুরগির খামারের মালিকেরা বিষয়টি মীমাংসা করে দেন।
এ বিষয় হৃদয়ের মা নাহিদা আকতার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অপহরণের পর আমার স্বামীর মোবাইলে একটা কল আসে। কলটা ছিল হৃদয়ের। ফোনে হৃদয় বলে, “মা আমাকে রাত ১২টার দিকে কিছু মানুষ আটক করে নিয়ে আসছে। আমি প্রায় ১২ ঘণ্টার মতো গাড়িতে ছিলাম। আপনারা ফোন দিয়েন না। ফোন দিলে আমাকে মেরে ফেলবে বলছে ওরা।”’
এ বিষয়ে রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল হারুন বলেন, ‘অপহরণের ঘটনায় কয়েক দিন আগে আমরা দুজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠালে আদালত তাঁদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। গতকাল রোববার এ ঘটনায় আমরা উমংচিং মারমা নামে আরও একজনকে গ্রেপ্তার করি। আজ (সোমবার) ভোরে তাঁর দেওয়া তথ্যমতে, রাউজানের কদলপুর-রাঙ্গুনিয়া সীমান্তবর্তী দলুছড়ি পাহাড়ি এলাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে অপহৃত যুবক হৃদয়ের খণ্ডিত লাশ উদ্ধার করি।’
ওসি আরও বলেন, ‘লাশ উদ্ধার করে ফেরার পথে পঞ্চপাড়া গ্রামে পাঁচ শতাধিক নারীসহ স্থানীয়রা আমাদের পথরোধ করেন। উত্তেজিত জনতা পুলিশের গাড়ি থেকে আসামি উমংচিং মারমাকে ছিনিয়ে নিয়ে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’