চট্টগ্রাম রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মে নয়নতারা, ক্রিসমাস ট্রি, পাতাবাহারসহ বাহারি ফুলের গাছ। ট্রেনে ওঠার আগে অনেকেই থমকে দাঁড়াচ্ছেন। সৌন্দর্য আর সবুজে মুগ্ধ হচ্ছেন। পরিত্যক্ত জায়গায় ফুল আর সবুজের সমারোহ—এ যেন স্টেশনের অন্য এক রূপ।
২০২০ সাল, দেশজুড়ে ভয়াবহ করোনা। রেলস্টেশনের ৭ ও ৮ নম্বর প্ল্যাটফর্মের মাঝখানে ২৫ বাই ৫০ ফুটের পরিত্যক্ত জায়গাটি নজরে আসে তৎকালীন রেলওয়ের পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তফিজ ভূঁইয়ার স্ত্রী মেহেরিন ইসলামের। আবর্জনায় পরিপূর্ণ পরিত্যক্ত জায়গাটি পরিষ্কারের উদ্যোগ নেন তিনি। এরপর সেখানে গড়ে তোলেন ফুল ও গাছের বাগান।
এখন এসব ফুল ও গাছ বড় হয়ে সুবাস ছড়াচ্ছে। পাল্টে গেছে স্টেশনের চিত্রও। মেহেরিন ইসলাম বলেন, ‘রেলের পরিত্যক্ত জায়গা পেলে সবাই দখলে মেতে ওঠে। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। কিন্তু আমরা বড় পরিকল্পনা নিয়ে জায়গাটি সংস্কারের উদ্যোগ নিই। ওই সময় রেলওয়ের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক আমাদের অনুমতিও দেন। তারপর আমরা পরিত্যক্ত জায়গায় ৫০ রকমের ফুল ও নানা রকমের গাছ লাগাই।’
মেহেরিন ইসলাম আরও বলেন, এসব গাছের কোনোটি পাতাবাহার, কোনোটি সুগন্ধি ফুলের। একসময় এসব জায়গায় আবর্জনার গন্ধ ছিল, আজ সেখানে ফুলের সৌরভ। মেহেরিনের স্বামী বদলি হওয়ার পর তাঁদের উদ্যোগে দেখাশোনা করার জন্য একজন মালিও নিয়োগ করা হয়। তাঁর নাম ইপু। যিনি তিন বছর ধরে বাগানটি পরিচর্যা করছেন।
ইপু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ছোট গাছগুলো এখন অনেক বড় হয়েছে। একসময় এসব জায়গা দিয়ে যাত্রীরা গেলে মুখ চেপে ধরত, এখন এই জায়গায় যাত্রীরা বড় করে নিশ্বাস নেয়। মোস্তাফিজ ভাই ও তাঁর স্ত্রী মেহেরিনের উদ্যোগে জায়গাটি সবার নজর কাড়ছে।
মোস্তাফিজ ভূঁইয়া বলেন, ‘সম্প্রতি জায়গাটি প্লাস্টিকের বেড়া দিয়ে সংরক্ষণ করছে রেলওয়ে। গাছগুলোও অনেক বড় হওয়ায় খুব সুন্দর দেখাচ্ছে। ছোট্ট উদ্যোগ হলেও আমাদের পরিকল্পনা ছিল স্টেশনের সব পরিত্যক্ত জায়গায় গাছ লাগানো। সেটি না পারলেও একটি জায়গায় আমরা সবুজের বাগান করতে পেরেছি।’
বিকেল ৫টার সোনার বাংলা ট্রেন ছাড়ার আগে কথা হয় যাত্রী আবুল কাশেমের সঙ্গে। তিনি বলেন, আগে আবর্জনার কারণে এখান দিয়ে চলাচল করা যেত না। এখন জায়গাটিতে গাছ লাগিয়ে সুন্দর করা হয়েছে। হরেক রকমের ফুলও ফুটেছে। এই জায়গায় এলে মনটা ভরে যায়।