করোনায় বিপর্যস্ত গোটা বিশ্ব। করোনা মহামারিতে অনেকেই অনেক কিছু হারিয়েছেন। কেউ হারিয়েছেন প্রিয়জনকে আর কেউ ব্যবসা-বাণিজ্য হারিয়ে হয়েছেন নিঃস্ব। মহামারি করোনা আমাদের অনেক কিছু শিখিয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও এখনো করোনার প্রকোপ আছে। প্রতিদিনই করোনায় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। এতসব উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যেও করোনার সময়কে কাজে লাগিয়ে অনেকেই হয়েছেন স্বাবলম্বী। এমনই একজন কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার ধামঘর ইউনিয়নের ভূবনঘর গ্রামের মৃত সোনা মিয়ার ছেলে সামসুল হক। তিনি বারোমাসি হলুদ তরমুজ, কেনিয়া ও দুই জাতের সাম্মাম নিয়ে কাজ শুরু করে সফলতার মুখ দেখেছেন।
সামসুল হক বলেন, ‘আমাদের ভুবনঘরের মাটিতে তরমুজ হয় না, এই কথাটি ছোটবেলা থেকে শুনে এসেছি। কিন্তু কেউ চেষ্টা করে দেখেনি। করোনার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রায় বন্ধ বললেই চলে। মনে মনে ভাবলাম বসে থেকে কি লাভ, কৃষিতে একটু মনোযোগ দেওয়া যাক। আমি ইউটিউব দেখে বারোমাসি তরমুজ, কেনিয়া আর সাম্মাম চাষ করার উদ্যোগ নিই। যেই ভাবনা সেই কাজ। ৩৫ শতক জমি বন্ধক নিয়ে ঢাকা থেকে বীজ ও মালচিং পেপার সংগ্রহ করে বারোমাসি হলুদ তরমুজ, কেনিয়া ও দুই জাতের সাম্মাম নিয়ে কাজ শুরু করে দিলাম। কৃষি বিভাগ আমাকে সহযোগিতা করছে। হলুদ তরমুজের গায়ের রং হলুদ হলেও ভেতরে লাল টকটকে। শিলাবৃষ্টি না হলে ও বৈরী আবহাওয়া না থাকলে ভালো টাকায় বিক্রি করতে পারব বলে আশা করি।'
মুরাদনগর সদর হতে গোমতী নদীর ব্রিজ পাড় হয়ে বেড়ি বাঁধের পাশে ভূবনঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। তার অদূরেই ৩৫ শতক জমিতে সামসুল হকের তরমুজখেত। ৫০ দিন আগে ঢাকা থেকে বীজ সংগ্রহ করে এনে বীজ বপন করেন তিনি। এ পর্যন্ত জমি প্রস্তুত, সার, বীজ, মাচা, সুতা ও জাল বাবদ তাঁর খরচ হয়েছে ৬০ হাজার টাকা। কয়েকদিন পরই তরমুজ খাওয়ার উপযোগী হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাইনুদ্দিন আহমেদ সোহাগ বলেন, ‘বারোমাসি হলুদ তরমুজ ও সাম্মামের পুষ্টিগুণ অনেক বেশি, খেতেও মিষ্টি। সারা বছর চাষ করা যায়। এগুলো এতদিন বিদেশে চাষ হতো। সম্প্রতি বাংলাদেশের কিছু কৃষি উদ্যোক্তা এ বারোমাসি তরমুজ চাষ করছেন। সামসুল হক একজন কৃষি উদ্যোক্তা। এর আগেও নতুন জাতের সবজি স্কোয়াশ ও ব্রোকলি চাষ করে ভালো সফলতা পেয়েছেন। তিনি স্কোয়াশ চাষে কৃষকদের আগ্রহী করে তুলেছেন। তাঁর আগ্রহ থেকেই মুরাদনগরে এই প্রথমবারের মতো চাষ হয়েছে হলুদ তরমুজ ও সাম্মামের। আশা করছি সামসুল হক আর কয়েকদিন পর এই অঞ্চলে নতুন সফলতার গল্পের সূচনা করবেন। আমরা তাঁর সঙ্গে আছি। যেসব কৃষক এই জাতের তরমুজ চাষে আগ্রহী হয়ে আমাদের কাছে আসবেন আমরা তাঁদের কারিগরি সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাব।’