কক্সবাজারের সৈকত থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে চান্দের পাড়ায় ২৯ একর জমির ওপর চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। নির্মাণ শ্রমিকদের ফুরসত নেওয়ার সময় নেই। অবকাঠামো নির্মাণে ব্যস্ত তাঁরা। প্রথম দেখায় বোঝার উপায় নেই হচ্ছেটা কী। দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পে সবচেয়ে বড় আধুনিক আইকনিক স্টেশনের কাজ চলছে সেখানে। ঝিনুকের আদলে তৈরি হওয়া ছয়তলা এ স্টেশনের তিনতলা পর্যন্ত নির্মাণ হয়েছে। এই স্টেশনের মাধ্যমে তুলে ধরা হবে পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সৌন্দর্য।
প্রকল্প এলাকায় প্রতিদিন সকাল থেকেই কাজ শুরু হয়, চলে রাত পর্যন্ত। দুই শ শ্রমিক দেশের সবচেয়ে বড় আধুনিক এই স্টেশন নির্মাণে কাজ করছেন। ঝিনুকের আদলে তৈরি হচ্ছে মূল ভবন। এখন চলছে চারতলা ও পিলার ছাদ নির্মাণের কাজ। নির্মাণাধীন ভবন ঘুরে দেখা যায়, গতানুগতিক নকশার বাইরে ভিন্ন নকশায় তৈরি হচ্ছে এ স্টেশন, যা এরই মধ্যে অনেকটা দৃশ্যমান। এরই মধ্যে স্টেশনটির ৪৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
নকশা অনুযায়ী স্টেশনটির দ্বিতীয়তলার ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করে যাত্রীরা উঠবেন ট্রেনে। ছয় তলা স্টেশন ভবনে যাত্রীদের ওয়েটিং রুম, লকার সুবিধা, শিশু যত্ন কেন্দ্র, খেলার জায়গা, রেস্টুরেন্ট, আবাসিক হোটেল, মিলনায়তনসহ আধুনিক সব সুবিধা থাকবে। দেশের নান্দনিক এ স্টেশন নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ২১৫ কোটি টাকা।
চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার রেলপথের প্রথম ধাপের নির্মাণকাজ চলছে। এই রেললাইনের আওতায় কক্সবাজার আইকনিক স্টেশনসহ মোট ৯টি স্টেশন হচ্ছে। সেগুলো হলো—দোহাজারী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, হারবাং, চকরিয়া, ডুলাহাজারা, ইসলামাবাদ ও রামু।
দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পটি ২০১০ সালে একনেকে অনুমোদন পায়। পরে ঠিকাদার নিয়োগের পর ২০১৭ সালে প্রকল্প নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করে। ফার্স্ট ট্র্যাক এই প্রকল্পের কাজ ২০২২ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কর্তৃপক্ষ বলছে, কাজ শেষ হতে ২০২২ সালের ডিসেম্বর লেগে যেতে পারে। বিষয়টি অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করছে। বিশেষত করোনা পরিস্থিতি একটি বড় দুশ্চিন্তার কারণ। তাই এই সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ না-ও হতে পারে বিবেচনায় দুই বছর মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
চীনের দুটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (সিআরইসি) ও চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (সিসিইসিসি) প্রকল্পটির কাজ করছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের তমা কনস্ট্রাকশন কোম্পানি ও ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড এর সঙ্গে যুক্ত।