হোম > সারা দেশ > কক্সবাজার

খুনের নেপথ্যে মাদ্রাসা দখল

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা ও উখিয়া প্রতিনিধি

দারুল উলুম নাদওয়াতুল ওলামা আল-ইসলামিয়াহ মাদ্রাসাটি দখল করতে চেয়েছিল একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ। ক্যাম্পে এমন আরও শতাধিক মাদ্রাসা তাদের দখলে আছে। দখল করা মাদ্রাসায় নিজেদের মতাদর্শ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে দলে ভেড়ানোই তাদের উদ্দেশ্য। দীর্ঘদিনের চেষ্টার পর ব্যর্থ হয়ে এমন হামলা চালানো হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করছেন মাদ্রাসাটির শিক্ষক, ভুক্তভোগী পরিবার ও সাধারণ রোহিঙ্গারা। তবে পুলিশ বলছে, ক্যাম্পে পুলিশি অভিযানে সন্ত্রাসীদের চিনিয়ে দেওয়ায় প্রতিশোধ নিতেও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে।  

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাজ করা একটি সূত্র বলছে, ক্যাম্পে অবস্থিত মসজিদ-মাদ্রাসাগুলো নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে ‘ওলামা কাউন্সিল’ নামে আলাদা একটি শাখা খুলেছে রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী সংগঠন ‘আরসা’।

ক্যাম্পে অবস্থিত মোট ৩৫৫টি মাদ্রাসায় তারা নিয়ন্ত্রণে নিতে চেয়েছিল। দুই মাস আগেও উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্পের এই মাদ্রাসা দখল করে ‘ওলামা কাউন্সিল’ভুক্ত করার চেষ্টা করে। কিন্তু মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ রাজি না হওয়ায় তখন থেকেই হুমকি দিয়ে যাচ্ছিল সংগঠনটি। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার ভোররাতে মাদ্রাসাটিতে হামলা চালিয়ে গুলি করে ও এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মাদ্রাসার শিক্ষক, ছাত্র ও স্বেচ্ছাসেবীসহ ছয়জন রোহিঙ্গাকে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।

মাদ্রাসার শিক্ষক হোসেন আহমেদ বলেন, ‘আরসার সদস্যরা বারবার এখানে আসতেন। তাঁদের সঙ্গে কাজ করতে বলতেন। কিন্তু তাঁদের কথা না শোনায় মেরে ফেলার হুমকি দিতেন।’ দারুল উলুম নাদওয়াতুল ওলামা আল-ইসলামিয়াহ মাদ্রাসাটির পরিচালক দ্বীন মোহাম্মদ বলেন, স্থানীয় রোহিঙ্গারা নিজেদের অর্থায়নে এই মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। দীর্ঘদিন ধরে আরসার সন্ত্রাসীরা মাদ্রাসাটি দখলের পাঁয়তারা করছিল।

অন্যদিকে রোহিঙ্গাদের অন্য একটি সূত্র বলছে, মাদ্রাসাটি পরিচালনা করত ‘ইসলামী মাহাজ’ নামে আরসাবিরোধী একটি রোহিঙ্গা সংগঠন। শেখ সালামত নামে আফগানফেরত এক রোহিঙ্গা এই সংগঠনটির নেতা। ইসলামী মাহাজের সদস্যরা ক্যাম্প ১৮সহ ছয়টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তাদের কর্মকাণ্ড চালায়। দুই সংগঠনের দ্বন্দ্ব থেকে এমন হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে অনেকে বলেছেন।  

১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক নাঈমুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, সব বিষয় মাথায় রেখে তদন্তের কাজ চলছে। একটি হত্যা মামলা করার প্রস্তুতি চলছে।

হঠাৎ কেন এই হত্যাকাণ্ড, জানতে চাইলে এই পুলিশ সুপার বলেন, মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের পর ক্যাম্পে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের অভিযানে সহযোগিতা করায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকতে পারে।  

এদিকে ছয়জন নিহতের ঘটনায় এ পর্যন্ত আটজনকে আটক করেছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন। শুক্রবার রাতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। ৮ এপিবিএনর অধিনায়ক ও পুলিশ সুপার শিহাব কায়সার খান বলেন, আটক ব্যক্তিদের পরিচয় যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে।

সেদিন রাতে কী ঘটেছিল
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ১৮ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এইচ/৫২ ব্লকের এই মাদ্রাসায় কথিত আরসার তিনটি গ্রুপ সম্মিলিত হামলা চালায়। ওই দিন দিবাগত রাত তিনটার দিকে হামলায় একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দেন আরসার ১৮ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্প জিম্মাদার (কমান্ডার) মোহাম্মদ বাসেরের ছেলে মৌলভি আকিজ প্রকাশ (৪০)। পরে ৯ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আব্দুল্লাহর ছেলে ডা. নুর কলিম ওরফে ওয়াক্কাস (৪০) ও  ৮ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মৌলভি জমির হোসেন ওরফে মৌলভি দিলদার হোসেনের (৪৫) নেতৃত্বে আরও দুটি গ্রুপ তাঁদের সঙ্গে যোগ দেয়। তারা সবাই মিলে প্রথমে গুলি ও পরে কুপিয়ে হাত, পা, গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে।

নিহত আজিজুল হকের (২২) মা সাজেদা বেগমের দাবি, তাঁর দুই ছেলে ওই মাদ্রাসায় পড়াশোনা করতেন। আরসার সদস্যরা মাঝে মাঝে তাঁদের বাড়িতে এসে দলে যোগ দিতে অনুরোধ করতেন। কিন্তু রাজি না হওয়ায় মৃত্যুর হুমকি দিতেন। সর্বশেষ এই ঘটনায় তাঁর ছোট ছেলে নূর কদর (১২) মাদ্রাসা থেকে বেঁচে গেলেও বড় ছেলে গুলিতে মারা যান।  

দারুল উলুম নাদওয়াতুল ওলামা আল-ইসলামিয়াহ মাদ্রাসার পরিচালক দ্বীন মোহাম্মদ বলেন, ‘মধ্যরাতে তাহাজ্জতের নামাজ আদায় করছিলেন মাদ্রাসার শিক্ষক ও ছাত্ররা। হঠাৎ করেই অস্ত্রধারী কিছু লোক তাঁদের ওপর হামলা চালায়।’

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বিভিন্ন সূত্র জানায়, রোহিঙ্গাদের শীর্ষনেতা মুহিবুল্লাহকে হত্যার পর ক্যাম্পজুড়ে বিরাজ করছে অস্থিরতা। কয়েকটি সন্ত্রাসী গ্রুপ রাত হলেই ক্যাম্পের নিয়ন্ত্রণ নেয়। এতে সাধারণ রোহিঙ্গাদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। রাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন না থাকায় সন্ত্রাসীদের তৎপরতা বেড়ে যায় বলে অভিযোগ করেছেন রোহিঙ্গারা।

এর আগে গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে রোহিঙ্গাদের শীর্ষনেতা মুহিবুল্লাহকে গুলি করে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে আরও এক রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীকে আটক করেছে ১৪ এপিবিএন পুলিশ।

হত্যাকাণ্ডের পর আরও পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সাঈদ আল নোমানের বিরুদ্ধে মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ

ভোটের মাঠে যারা বাধা হবে, তাদের অস্তিত্ব থাকবে না: আমীর খসরু

কুমিল্লা-৪: হাসনাত আবদুল্লাহর সমর্থনে সরে দাঁড়ালেন জামায়াত প্রার্থী

পটিয়ায় বাস-ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ট্রাকচালক নিহত, আহত ৪

সাতকানিয়ায় খালের পাড় কেটে মাটি বিক্রি

সাতকানিয়ায় বন্দুকসহ এক ব্যক্তি গ্রেপ্তার

চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ধানের শীষ পেলেন বেনজীরের ব্যবসায়িক সহযোগী জসিম

চট্টগ্রামে গিয়াস কাদেরের আসনে গোলাম আকবরকেও মনোনয়ন বিএনপির

সুষ্ঠু নির্বাচনই যথেষ্ট নয়, গণতান্ত্রিক উত্তরণ ঘটাতে হবে: বদিউল আলম

চট্টগ্রামে দুর্ঘটনায় প্রাইভেট কার আরোহী যুবদল নেতা নিহত